এশিয়ান গেমস : ভেন্যুর ২০ শতাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ে
‘আর ইউ লুকিং ফর, মিডিয়া ট্রিবিউন’-এত সুন্দর ইংরেজী শুনে খানিকটা হতচকিত বাংলাদেশি সাংবাদিকরা। অন্য ভেন্যু এমনকি মেইন মিডিয়া সেন্টারেও ভলান্টিয়াররা ইংরেজী জানলেও বুঝতে এবং বোঝাতে কষ্ট হয়। জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ’র ইংরেজী কথা শুনে সবারই খানিকটা স্বস্তি, ‘আহ অবশেষে একটু আরামের ইংরেজী শুনলাম’।
হাংজু গেমসে বাংলাদেশের একমাত্র পদক এসেছে ক্রিকেট থেকে। তাই জিজিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েই অন্য ভেন্যুর চেয়ে বেশি যাওয়া হয়েছে। অন্য ভেন্যুর সঙ্গে জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়েছে। এই ভেন্যুর ভলান্টিয়ারদের প্রায় সবাই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী হওয়ায় ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা যেমন কম, আবার তথ্য প্রাপ্তির বাড়তি সুবিধাও রয়েছে। যা অন্য অনেক ভেন্যুতে অপ্রতুল।
হাংজুতে ৩০টি ভেন্যুতে চলছে এশিয়ান গেমস। এর মধ্যে ছয়টি ভেন্যুই বিশ্ববিদ্যালয়ের। অর্থাৎ, গেমস ভেন্যুর পাঁচ ভাগের এক ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে হচ্ছে। ক্রিকেট জিজিয়াং প্রযুক্তি, হাংজু নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভলিবল, জিজাং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হ্যান্ডবল, জিজাং বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামে বাস্কেটবলসহ আরও কয়েকটি খেলাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হচ্ছে।
এসব ক্যাম্পাসে হওয়া খেলাগুলোর সবগুলোতে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে না। তবে ২-৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে বেশ অভিভূতই হতে হয়েছে। পড়াশোনায় যেমন গুরুত্ব তেমনি ক্রীড়াখাতেও গুরুত্ব ব্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া অবকাঠামো আগে থেকেই উন্নত, গেমস উপলক্ষে আরও আধুনিকায়ন হয়েছে। ইনডোর, আউটডোর ফিল্ড, প্রেস কনফারেন্স, মিক্সড জোন, ড্রেসিংরুম, গ্যালারি সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানের। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেন্যু হিসেবে যা অন্য ভেন্যুর চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই, বরং এগিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গেমস হওয়ায় বেশ খুশি জিজিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলজেরিয়ার শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ, ‘আমরা খুবই আনন্দিত এশিয়ান গেমসের অংশ হতে পেরে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্রীড়াক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ছে। এটা আমাদের জন্য দারুণ অনুভূতির।’ বিদেশি শিক্ষার্থীর মতো একই রকম প্রতিক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের, ‘আমি এখানে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি। এটা নতুন এক অভিজ্ঞতা। নিজেও নানা বিষয় শিখছি এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ইতিহাস সাংবাদিকসহ সবাইকে জানাচ্ছি।’
আন্তর্জাতিক গেমসগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ব্যবহার বিশ্বে নতুন কিছু নয়। গত বছর তুরস্কের কোনিয়ায় অনুষ্ঠিত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসেও কয়েকটি ভেন্যু ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের। সেই গেমসের শেফ দ্য মিশন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সদস্য সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর হাংজু গেমসেও এসেছিলেন। তার চোখেও পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ব্যবহারের বিষয়টি, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক গেমস আয়োজন অবশ্যই দারুণ ব্যাপার। এতে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সব কিছুর দারুণ মেলবন্ধন হয়।’
বাংলাদেশের শীর্ষ চার বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর ক্রীড়া অবকাঠামো রয়েছে। ক্রীড়া সংগঠক সিরাজউদ্দিন আলমগীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া বিভাগের উপ-পরিচালকও। তিনি শীর্ষ চার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন, ‘নতুন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া অবকাঠামোতে খানিকটা ঘাটতি থাকলেও পুরনো চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া অবকাঠামো ভালো রয়েছে। তবে সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের গেমস আয়োজনের জন্য প্রয়োজন আধুনিকায়ন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ দিকে নজর দিলে অবশ্যই সম্ভব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে এক সময় জাতীয় ফুটবল দলের অনুশীলন হতো। ১৯৭৮ সালে যুব এশিয়া কাপ ফুটবলের ক্যাম্প ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট মাঠে আগে বিদেশি দলগুলো অনুশীলন করতো। সাম্প্রতিক সময়ে খেলা তো দূরের কথা, অনুশীলন রেওয়াজও দূরে সরে গেছে।
এজেড/এএইচএস