নিঃশব্দের ট্যাক্সি লাইন!
হাংজু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ। প্রধান ফটক থেকে বের হতেই হাংজুতে আগতরা একে একে লাইন দাঁড়াচ্ছেন। বিমানবন্দরের বাইরে এমন লাইন সাধারণত দেখা যায় না। মিনিট কয়েক পরই বোঝা গেল সবাই ট্যাক্সির অপেক্ষায়। সেই অপেক্ষা বিড়ম্বনাহীন। বেশ সুশৃঙ্খলভাবে সবাই একে একে ট্যাক্সিতে উঠছেন।
বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর প্রায় সবারই লক্ষ্য থাকে ট্যাক্সি। প্রায় সব দেশেই ট্যাক্সি ড্রাইভাররা আগতদের ডাকাডাকি করেন। যাত্রী-চালকদের সঙ্গে দরকষাকষি তো অতি সাধারণ বিষয় বিশ্ব জুড়ে। তবে চীনের হাংজুতে দেখা গেল একেবারে বিপরীত চিত্র। যাত্রীরা লাইনে যেভাবে দাড়িয়ে, ট্যাক্সিওয়ালারাও সারিবদ্ধভাবে আসতে থাকেন। একজন যাত্রী গাড়িতে উঠছেন, আরেকজন ট্যাক্সি নিয়ে সামনে এগুচ্ছেন এরপর সেটায় আরেকজন উঠছেন।
হাংজুতে যাত্রীদের ট্যাক্সিতে উঠা এবং চালকদের গাড়িতে নেয়ার মুহূর্তে নেই কোনো কথার আদান-প্রদান। গাড়িতে বিমানবন্দর এলাকা ছাড়ার সময় চালকরা জিজ্ঞাসা করেন যাত্রী কোথায় যাবেন, আবার যাত্রীরা গাড়ি দুই এক মিনিট চলার পর জানান তাদের গন্তব্য স্থল। চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, চীনের প্রায় সকল বিমানবন্দরেই এই অবস্থা। বিমানবন্দরে যে সকল চালক আসেন তারা যাত্রীর চাহিদা মতো জায়গায় যেতে বাধ্য (যদি না ঐ শহরের বাইরে হয়)। অন্য দিকে যাত্রীও মিটারে প্রদর্শিত ভাড়া পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইট। এত সংখ্যক যাত্রীর ট্যাক্সি লাইন ব্যবস্থাপনার জন্য নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছে। এদের অবশ্য খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। কয়েকজন যাত্রী গাড়িতে উঠার মুহুর্তে লাইনে এক মিনিটের মতো আটকে রাখেন। সেই যাত্রীরা গাড়িতে উঠলে আবার লাইনে ছেড়ে দেন। এভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই কয়েক শ’ত যাত্রী নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন নিঃশব্দেই। বিশেষ প্রয়োজনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীরা বাঁশি বাজান আর খুব বেশি হলে অল্প কয়েক বাক্য ব্যবহার করেন।
অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার প্রবণতা চীনের ট্যাক্সি চালকদেরও নাকি রয়েছে। তবে সেই সংখ্যাটা বেশ অল্পই। যারা একটু বেশি ভাড়া নিতে চান , তারা বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ করে যাত্রীদের সঙ্গে দরদাম করেন। তবে বাইরের ব্যবস্থা খুব সুশৃঙ্খল হওয়ায় ভেতরে দর কষাকষির রেওয়াজ খুবই কম বলে জানা গেছে।
রাতের বিমানবন্দরে ট্যাক্সির ব্যতিক্রমী লাইনের মতো দিনের হাংজুর ট্র্যাফিক ব্যবস্থাও সুন্দর। বেশ বড় সড়কগুলোতে গাড়ি ছুটছে। আবার চালক নিজেই থামিয়ে দিচ্ছেন লাল সিগন্যাল দেখে। কয়েকটি সড়ক ঘুরে ট্রাফিকের দেখা মিলেনি। গাড়ির চালকদের মতো পথচারিদের জন্যও রয়েছে সিগন্যাল। তারাও সিগন্যাল মেনে ক্রসিং ব্যবহার করেন। গতকাল রাত ও আজ বিকেল অব্দি তেমন ট্রাফিক জ্যাম দেখা যায়নি হাংজুতে। তবে অফিসের কর্মঘন্টায় খানিকটা জ্যাম থাকে বলে জানান স্থানীয়রা।
অন্য শহরগুলোর মতো হাংজুতেও রয়েছে মেট্রো রেল সার্ভিস। মেট্রো রেল ব্যবস্থাপনাও যথেষ্ট পরিপাটি। চীনে ইংরেজির প্রচলন খানিকটা কম হলেও মেট্রো রেলে অবশ্য সেই ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি স্টেশনের নাম ইংরেজিতে লেখা এবং প্রতিটি মুহূর্তে ইংরেজি ঘোষণাও আছে।
এজেড/জেএ