হারমানপ্রীতকে নিয়ে মুখ খুললেন জ্যোতি
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সর্বশেষ ম্যাচে অপ্রত্যাশিত আচরণে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে স্টাম্প ভাঙা ছাড়াও ম্যাচ শেষে ফটোসেশনে বাংলাদেশের খেলোয়াড় ও আম্পায়ারদের উদ্দেশে আপত্তিকর মন্তব্য করে বসেন তিনি। যে কারণে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ফটো সেশন সংক্ষিপ্ত করে চলে গিয়েছিলেন ড্রেসিংরুমে।
পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে জ্যোতি এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘ও এমন কিছু শব্দ বলেছে যা আমি বলতে পারছি না। এটা তো জেন্টালম্যান গেম, ওখানকার পরিবেশ এমন ছিল তাই দল নিয়ে সরে আসছি।’ হারমানপ্রীতের বিষয়টি বলতে গেলে এড়িয়ে গেছেন জ্যোতি। তার মতে, পরবর্তী পদক্ষেপ ম্যাচ রেফারি কিংবা ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ নেবে। তবে এবার পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনা তুলে ধরলেন তিনি।
অশোভন আচরণের দায়ে আইসিসির শাস্তি পেয়েছেন হারমানপ্রীত। দুই ম্যাচের জন্য নির্বাসনে ভারতীয় অধিনায়ক। তবে ঘটনা এখানেই থেমে থাকছে না। নিজ দেশেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন হারমানপ্রীত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, বিসিসিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে। জ্যোতির কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়, কী মনে হয়, খেলার উত্তেজনায় হারমানপ্রীত কাণ্ডটা ঘটিয়ে বসেছেন? এটা কি সেই ধরনের ভুল, যা খেলাধুলায় হয়েই থাকে?
আরও পড়ুন: ভুয়া সনদের জেরে পুলিশের পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন হারমানপ্রীত
জ্যোতি বলেন, উত্তেজনার বশেই এটা হয়েছে, আর খেলাধুলোয় এসব হয়েই থাকে। কিন্তু ব্যাপারটা যদি মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, আমার কিছু বলার থাকত না কিংবা খারাপ লাগত না। আমি আমার প্লেয়ারদের তখন বলতাম যে, খেলাধুলায় এসব ঘটে। তাই এসবকে ভুলে সামনে এগোও। কিন্তু সেটা তো হয়নি। এখানে বলে রাখি, আমার টিমের অনেক ক্রিকেটারের কাছেও হারমানপ্রীত আদর্শ। কিংবদন্তি। ওরা হারমানপ্রীতকে সামনে রেখে এগোয়। অথচ সেদিন ওরা আমাকে এসে বলেছিল যে, হারমানপ্রীতের মতো একজন কিংবদন্তি আমাদের সঙ্গে কী করে ওই কাজটা করতে পারল? শুনে খারাপ লেগেছিল আমার। কষ্টও পেয়েছিলাম।
ফটো সেশন চলাকালে হারমানপ্রীতের অসম্মানজনক আচরণের কারণে টিম নিয়ে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিলেন জ্যোতি। এ প্রসঙ্গে টাইগ্রেস অধিনায়ক বলেন, খেলায় কিছু জিনিস করা যায়, কিছু জিনিস যায় না। পুরস্কার বিতরণীর সময় খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাঠের বাইরে, আমরা প্লেয়াররা ছিলাম, যারা কি না একই খেলা খেলে থাকি, আর যাদের একে অন্যকে সম্মান করা উচিত। আমি আশা করেছিলাম, যা হয়েছে ভুলে হরমনপ্রীত আর স্মৃতি এসে আমাদের টিমের পিঠ চাপড়ে বলবে, ভাল খেলেছ। মহেন্দ্র সিং ধোনি বা বিরাট কোহলিকে এ জিনিস করতে দেখেছি আমি। কিন্তু সেটা যখন হল না, উল্টে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অসম্মানজনক কথা বলে গেল হরমনপ্রীত, আমি টিম নিয়ে বেরিয়ে যাই। যা হচ্ছিল, তাতে নতুন করে ঘৃতাহুতি দিতে চাইনি। কাউকে না কাউকে ব্যাপারটা শেষ করতে হত। তাই আমিই টিম নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে সেটা করি।
হারমানপ্রীত কাঠগড়ায় তুলেছেন বাজে আম্পায়ারিংকে। এটা কতটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন জ্যোতি? জবাবে তিনি বলেন, একই আম্পায়াররা তো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ছিলেন, ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন, যে সিরিজ ভারত জিতেছিল। কোথায়, তখন ভারত আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগ করেনি তো! আরও একটা প্রশ্ন আছে। ভারত যদি ওয়ান ডে সিরিজ জিতত, আম্পায়ারিং নিয়ে অসন্তোষ দেখাত তো? নাকি সেটা দেখানো হয়েছে, ভারত ওয়ান ডে সিরিজ জিততে পারেনি বলে? সেই হতাশা থেকে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে?
বিতর্ক ছাপিয়ে ভারতের বিপক্ষে সিরিজটা মাইলফলক হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। জ্যোতি বলেন, এটা আমাদের কাছে বড় রেজাল্ট বলতে পারেন। অনেক জুনিয়র প্লেয়ার খেলেছিল টিমে, সিনিয়ররা ছিল না। এমনকী আমাদের টিমের অনেকে তো হারমানপ্রীত-স্মৃতির বিশাল ভক্ত। সেই হারমান-স্মৃতির ভারতকে হারানো, শেষে সিরিজ টাই করা, আমাদের কাছে বিশাল ব্যাপার। আশা করি, বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট এরপর এগোবে।
এফআই