সুপার ওভারে হোল্ডারকে ছয় বাউন্ডারি হাঁকানো কে এই ফন বিক?
নিকোলাস পুরানের সেঞ্চুরিতে ৩৭৪ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কে জানত, সেই রানই ছুঁয়ে ফেলবে নেদারল্যান্ডস। তেজা নিদামানুরুর পাল্টা সেঞ্চুরিতে ডাচরাও থামে ঠিক ৩৭৪ রানে। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে অপেক্ষা করছিল আরও বড় চমক। সুপার ওভারে নেদারল্যান্ডস বলা ভালো এক লোগান ফন বিকের সামনেই দুমড়েমুচড়ে যায় ক্যারিবীয়রা।
হোল্ডারের করা সুপার ওভারে ডাচ এই অলরাউন্ডার ৬ বলের সবকটিতেই বাউন্ডারি মারেন। ৩ ছক্কা আর ৩ চারে ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও জাদু দেখান তিনি। তার ওভারে ৩১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ৮ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বিশ্ব ক্রিকেটে অখ্যাত এই ফন বিককে অনেকদিন মনে রাখবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ডাচদের বিপক্ষে এমন হারে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন অনেকটাই শেষ হয়ে গেল ক্যারিবীয়দের! কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার সিক্সে উঠেছে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে। যেখানে সুপার সিক্সে ওঠা গ্রুপ 'এ' এর অন্য দুই দল জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের পয়েন্ট ২।
উইন্ডিজদের জন্য দুঃস্বপ্ন হওয়া কে এই ফন বিক?
লোগান ফন বিকের জন্ম নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। তার বেড়ে ওঠাও সেখানে। খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়েও। এরপরই তিনি নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলা শুরু করেন। ৩২ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের বাবা নেদারল্যান্ডসের অধিবাসী। সে হিসেবেই দেশটির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা।
কাকতালীয় হলেও সত্যি বর্তমান নিউজিল্যান্ড টিমের টম লাথাম, ম্যাট হেনরি এবং মাইকেল ব্রেসওয়েলের সঙ্গে একসঙ্গে একটা সময় থাকতেন ফন বিক। ২০১৭ সালে ক্যান্টারবেরি থেকে ওয়েলিংটনে চলে আসেন ফন বিক। ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডসের হয়ে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে কিউই তারকা হেনরি নিকোলসের সঙ্গে দুইবছর ক্রিকেট খেলেছেন তিনি।
ক্রিকেটীয় পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন ফন বিক। তার প্রপিতামহ স্যাম গালিয়েন দুটি আলাদা আলাদা দেশের হয়ে টেস্টে খেলেছেন। ১৯৫১-৫২ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে পাঁচটি টেস্টে খেলেছেন তিনি। এরপর নিউজিল্যান্ডের হয়ে ও তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছেন তিনটি টেস্ট।
২০১০ নিউজিল্যান্ডের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন লোগান ফন বিক। জানলে অবাক হবেন, শুধু ক্রিকেট নয় বাস্কেটবলও সমান দক্ষ তিনি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্ব বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশিপেও নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটকেই বেছে নিলেন। ২০১২ সালে প্রথমবার একটি কাউন্টি ম্যাচে অ্যাসেক্সের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের হয়ে প্রথমবার খেলেন লোগান।
এরপর যেহেতু নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন, ফলে কুলিং অফ পিরিয়ড কাটিয়ে তাকে খেলতে হয় ডাচদের হয়ে। কারণ আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের হয়ে একবার খেলার পরে আ্যাসোসিয়েট দেশের হয়ে খেলতে অন্ততপক্ষে তিন বছর সময়ের ব্যবধান থাকতে হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য স্থানীয় প্রতিভাদের উৎসাহ দেওয়া।
২০১৪ সালে ডাচদের হয়ে বাংলাদেশে টি-২০ বিশ্বকাপে খেলেন তিনি। ওই বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কেন উইলিয়ামসনের উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি। সেই ফন বিক এবার জিম্বাবুয়ের ২২ গজে দুই বারের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ত্রাস ছড়ালেন।
এফআই