আইপিএলে কত টাকা পান আম্পায়াররা?
ক্রিকেট বিশ্বের বড় বড় সব তারকাদের দেখা মেলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। চার-ছক্কা আর অর্থের ঝন-ঝনানি সবমিলিয়ে মাস দুয়েক ক্রিকেট ভক্তদের বুদ করে রাখে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। এমন রোমাঞ্চকর আয়োজনের পেছনে বড় একটা ভূমিকা আছে অর্থের। বিশ্বের অন্য সব লিগের সঙ্গে এই জায়গাটায় বড় একটা পার্থক্যও আছে আইপিএলের।
আইপিএলের মূল্য আসলে কতো? এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকায়, সঠিক সংখ্যাটা বলা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, আইপিএল থেকে যে শুধুমাত্র ক্রিকেটাররাই বড় অঙ্কের টাকা পান, তা কিন্তু নয়। অন্যান্য লিগের তুলনায় এখানে আম্পায়ারদের উপার্জনও কয়েকগুণ বেশি। যদি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সঙ্গে আইপিএলের আম্পায়ারদের পারিশ্রমিকের তুলনা করা হয়, তাহলে যে কারও চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!
বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং গ্ল্যামারাস লিগ বলা হয় বিপিএলকে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে একজন এলিট আম্পায়ার ম্যাচ প্রতি ২৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে আইপিএলে একজন এলিট আম্পায়ারের ম্যাচ প্রতি আয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৯৮ হাজার রুপি বা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিপিএলের তুলনায় আইপিএলে একজন আম্পায়ারের আয়ের পরিমাণ অন্তত দশগুণ বেশি।
আরও পড়ুন >> যেসব বাংলাদেশির আইপিএল ক্যারিয়ার শেষ ১ ম্যাচেই
আইপিএলে অবশ্য দুই ক্যাটাগরির আম্পায়ার থাকেন। এবারের আসরে এলিট আম্পায়ার হচ্ছেন মোট ৯ জন। এই ৯ জন ছাড়াও এবারের আসরে আরও ৫ জন ইমার্জিং আম্পায়ার ম্যাচ পরিচালনা করছেন। চলমান আসরে আম্পায়ারের তালিকায় আছেন অনিল চৌধুরী, ক্রিস গাফফানী, নিতিন মেনন, শামসুদ্দিন, পল রাইফেল, এস রাভি, রিচার্ড ইলিংওথ, উলহাস গান্ডে, ভিনিত কুলকার্নি, অনিল দান্দেকার, কে শ্রীনিবাস, পশ্চিম পাঠাক, ভিরেন্দর শর্মা, ইয়াশোয়ান্থ বার্দে।
ইমার্জিং আম্পায়ারদের বেতন-ভাতা অবশ্য এলিটদের তুলনায় কিছুটা কম। তাদের ম্যাচ ফির পরিমাণ ৫৯ হাজার রুপি। তবে ইমার্জিং আম্পায়ারদের মূল উদ্দেশ্য থাকে বড় ম্যাচের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা নেওয়া। ফলে তাদের ক্যারিয়ারের কথা ভাবলে এটা তাদের জন্য বড় একটা সুযোগ।
ম্যাচ ফির পাশাপাশি দৈনিক ভাতা ও স্পন্সর মানি হিসেবে আরও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পান এলিট আম্পায়াররা। ১২ হাজার ৫০০ রুপি করে ডেইলি অ্যালাওয়েন্স পান তারা। এর মধ্যে তাদের যাতায়াত ও থাকার খরচ ধরা আছে। তাছাড়া প্রত্য়েক আম্পায়ার ৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা করে আসরে বোনাস পান।
আরও পড়ুন >> আইপিএলের মাঝপথে ফেরা লিটন পুরো টাকা পাবেন?
এতক্ষণে আপনাদের মনে নিশ্চয়ই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, আইপিএল কতৃপক্ষ এত টাকা কোথায় পায় বা তাদের আয়ের উৎস কি?
আইপিএলের আয়ের বড় একটা উৎস হচ্ছে সম্প্রচার স্বত্ত্ব। চলতি আসরসহ মোট পাঁচ মৌসুমের জন্য ৪৮ হাজার ৩৯০ কোটি রুপিতে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। ডিসনি স্টার, ভায়াকম ১৮ ও টাইমস ইন্টারনেট কিনেছে ভারতের টি-টোয়েন্টি লিগের চার ক্যাটাগরির স্বত্ব।
আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের জন্য টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্ব আছে ডিসনি স্টারের কাছে। ২৩ হাজার ৫৭৫ কোটি রুপিতে এ স্বত্ব কিনেছে তারা। তবে টেলিভিশন স্বত্বের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ডিজিটাল স্বত্ব। ২৩ হাজার ৭৫৮ রুপিতে সে স্বত্ব কিনেছে ভায়াকম ১৮। উপমহাদেশে ডিজিটাল স্বত্বের সঙ্গে তাদের কাছে থাকবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার টেলিভিশন ও ডিজিটাল স্বত্ব। মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ৪১৩ কোটি রুপিতে স্বত্ব কিনেছে টাইমস ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন: না খেলেও কলকাতা থেকে টাকা পাবেন সাকিব?
উপমহাদেশের সম্প্রচার স্বত্বের জন্য স্টার প্রতি ম্যাচে আইপিএলকে দেবে প্রায় ৫৭ কোটি ৫০ লাখ রুপি। ডিজিটাল স্বত্বের জন্য ভায়াকম ১৮ খরচ করেছে মোট ২০ হাজার ৫০০ কোটি রুপি। প্যাকেজ ‘সি’-এর (গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের বাড়তি সংযোজন) জন্য আরও ২ হাজার ৯৯১ কোটি রুপি আইপিএলকে দেবে তারা। ফলে প্রতি ম্যাচে প্রায় ৫৮ কোটি রুপি তাদের কাছ থেকে পাবে আইপিএল।
সবমিলিয়ে এবারের পাঁচ আসরে এখান থেকে ৪৮ আহজার ৩৯০ কোটি টাকা আয় করবে আইপিএল কতৃপক্ষ। আর এই সময়ে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ৪১০টি। তাই প্রত্যেক আসরে আয়ের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৯ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কপাল পুড়ল লিটনের?
আর যদি ম্যাচ প্রতি আয়ের হিসেব করা হয় তাহলে টাকার অঙ্কটা কমে দাঁড়ায় ১১০ কোটিতে। যেখানে টিভি থেকে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ, ডিজিটাল থেকে ৫০ব কোটি আর ওভারসিজ থেকে ২ কোটি ৬০ লাখ রুপি আয় হবে।
টাকার এই অঙ্কটা যদি আপনি আরও ছোট করতে চান, তাহলে প্রতি বলে কত টাকা আয় করে বিসিসিআই সেই হিসেবটা দেখতে পারেন। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ বৈধ্য ডেলিভারীর হওয়ার সম্ভাবনা আছে ২৪০ টি (২০*৬)। বলের সর্বোচ্চ সংখ্যা ধরলেও বলপ্রতি আয়ের পরিমাণ দাড়ায় ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৩রুপি।
এইচজেএস