‘অন্ধকার’ ব্যাডমিন্টনে আলো আসবে কি!
পল্টনস্থ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়াম যৌথভাবে ব্যবহার করে টেবিল টেনিস ও ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। ইনডোরের এক অংশে সকাল-সন্ধ্যা চলে টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের অনবরত অনুশীলন। পাশেই ব্যাডমিন্টন কোর্টে বিরাজ করে শূন্যতা। ইনডোর গেমসের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় খেলা ব্যাডমিন্টন। বিশেষ করে শীতের সময় সবাই ব্যাডমিন্টনে মেতে উঠে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাডমিন্টনে ‘শীত-গ্রীষ্ম’ সব কালই যেন এক!
সংগঠকদের কোন্দলে সম্ভাবনাময় খেলাটি এখন গভীর সংকটে। গত সপ্তাহে দুবাইয়ে এশিয়ান ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই শাটলার। তারা এত বড় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের নাম ও পতাকা তুলে ধরেছেন কিন্তু সেটি তাদের নিজস্ব খরচে। ফেডারেশন থেকে খেলোয়াড়রা শুধু সরকারি আদেশ ইস্যুতে সহায়তা পেয়েছেন। পর্যাপ্ত অনুশীলন, কোচিং ছাড়া ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। এরপরও এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের দুই শাটলারের গমন এবং ফলাফল কোনো কিছুই গণমাধ্যমে অবহিত করেনি ফেডারেশন। ব্যাডমিন্টনের সামগ্রিক সংকটাবস্থার অতি ক্ষুদ্র চিত্র এটি।
দেশের ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো পরিচালিত হয় ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক ক্রীড়াবিদদের দ্বারা। ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন গত এক বছর পরিচালিত হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। ফেডারেশনের দায়িত্ব সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে বাধ্য করেছেন অবশ্য ব্যাডমিন্টনের সংগঠকরাই। গত বছর নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে মতানৈক্য থেকে দুই পক্ষ এক হয়ে ভোট বর্জন করেছিল। যা ক্রীড়া গণতন্ত্রের কালো দিবস হিসেবে গণ্য।
সেই ন্যক্করজনক ঘটনার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে সাত সদস্যের একটি সাময়িক অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সদস্যদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে পেশাগত অনেক ব্যস্ততা ও দায়িত্ব শেষে ফেডারেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা খানিকটা কষ্টসাধ্যই। তাই গত এক বছর সিইও’র অধীনেই ফেডারেশন দেখভাল হয়েছে। ক্রিকেট ও ফুটবল ছাড়া দেশের বাকি সব ফেডারেশনে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকই প্রধান নির্বাহী হিসেবে গণ্য হয়। ২০১৯ সালে ব্যাডমিন্টনে বেতনভুক্ত সিইও নিয়োগ দেয়া হয়।
২০১৬ সালের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন শামসুল আরেফিন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পরের বছর। ঐ মেয়াদের বাকি প্রায় তিন বছর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়া আমির হোসেন বাহার সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফেডারেশন পরিচালিত করেন।সেই সময় প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগও আয়োজন হয়নি। বাহারের সহ-সভাপতি থেকে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বিধি বর্হিভূত হওয়ায় ক্রীড়াঙ্গনে অত্যন্ত সমালোচিত হয়েছিল।
২০২০ সালে কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কবির শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাডহক কমিটি দিয়েছিল। ২০২২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। দুই পক্ষ মিলে ভোট বর্জনের পর আবার অ্যাডহক কমিটি হয়। সেই অ্যাডহক কমিটির সম্পাদকও পরিবর্তন হয়ে এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চৌকস সচিব পরিমল সিংহ দীর্ঘদিনের টেনিস ফেডারেশনের নির্বাচনী জট ভেঙেছেন। এবার ব্যাডমিন্টনের অ্যাডহক সংস্কৃতিও বদলাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রজ্ঞাপন হওয়ায় ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে দুই পক্ষের দৌড়ঝাপ। গত বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে টানা হেচড়া চলছে। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদুর রহমান রানা ও আমির হোসেন বাহারের নাম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।
ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাচনের ‘চাবিকাঠি ’ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ ফোরামের হাতে। ৯৮ ভোটের ৬০ টির বেশি জেলা-বিভাগের। তাই ফোরামের সমর্থন যেদিকে সেদিকেই থাকবে ফলাফল। বাহার ফেনী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ফোরামের আনুকল্য বেশি। বাহারকে ফোরামের একজন শীর্ষ নেতা সমর্থন করলেও অন্য নেতারা বাহারের আচার-আচরণ ও যোগ্যতায় সন্দিহান। সেক্ষেত্রে তাদের বিকল্প প্রার্থী বরগুনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর।
ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের অনেকে আবার ব্যাডমিন্টনের স্বার্থে জোবায়েদুর রানাকে সমর্থন দিচ্ছেন। সেই সমর্থনের কারণে ফোরাম নেতৃবৃন্দ বাহারের দিকে পুরো সমর্থন দিতে পারছেন না। আগামীকাল ফোরামের সভা সম্পর্কে সংগঠনটির মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু বলেন, 'আমাদের নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল। সামনে কয়েকটি ফেডারেশনের নির্বাচন এবং ফুটবলের উদ্ভূত পরিস্থিতি উপলক্ষ্যে আমরা সাধারণ আলোচনা করব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাডমিন্টনের সাবেক এক চ্যাম্পিয়ন বলেন, 'ব্যাডমিন্টনে খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সঠিক নেতৃত্ব ফেডারেশনে না আসলে সামনে খেলাটির আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে’। ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর কামরুন নাহার ডানা। সাবেক এই ব্যাডমিন্টন তারকা রাখঢাক না রেখে সরাসরিই বলেছেন, 'দেশের ক্রীড়াঙ্গনের নির্বাচন কিভাবে হয় এটা সবারই জানা। একটি সম্ভাবনাময় খেলাকে পুর্নজীবিত করতে হলে রানার মতো ব্যক্তিরই সাধারণ সম্পাদক হওয়া উচিত। সব দিক থেকেই সে যোগ্য।'
এজেড/এইচজেএস