১৭ বছরেই টেনিসের ‘জয়া’ মাসফিয়া
টেনিস অঙ্গনের পরিচিত মুখ মাহমুদ আলম। টেনিস ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে রমনা টেনিস কমপ্লেক্সের সংযোগ সেই ১৯৯৭ সাল থেকে। ২৬ বছরে এই টেনিস কোর্টে অনেক ঘটনা দেখেছেন। আজ এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলেন। সেই সাক্ষীর পরোক্ষ অবদান তারও।
মাহমুদের দুই মেয়ে মাসফিয়া ও মাসতুরা উভয়ে টেনিস খেলেন। ছোট মেয়ে মাসতুরা অনূর্ধ্ব-১২ পর্যায়ে টেনিস খেলছেন। বড় মেয়ে মাসফিয়া আফরিন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী রেফারি হিসেবে চলমান জুনিয়র বিশ্ব টেনিসে দায়িত্ব পালন করছেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন মাসফিয়া। টেনিস খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের নানা রেকর্ড সংরক্ষণ করা মাহমুদের নিজের মেয়েই আজ রেকর্ডের পাতায় তাই খানিকটা আপ্লুত তিনি, ‘বাবা হিসেবে আসলে দিনটি ভিন্ন। তবে এখানেই তৃপ্ত হওয়ার কিছু নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত হোয়াইট ব্যাচ।’ বাবা মাহমুদের চেয়েও স্বপ্নবাজ মেয়ে মাসফিয়া, ‘আমি অবশ্যই হোয়াইট ব্যাচধারী হওয়ার চেষ্টা করব। স্বপ্ন দেখি একদিন গ্র্যান্ড স্ল্যামে রেফারিং করার।’
ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসফিয়া। ভিকারুননিসা শুধু লেখাপড়ায় নয়, খেলাধুলাতেও অগ্রগণ্য। এই স্কুলের মেয়েরা হ্যান্ডবলে দারুণ আধিপত্য। তবে স্কুলে যাওয়ার আগেই মাসফিয়ার হাতে উঠেছে টেনিসের র্যাকেট, ‘৪ বছর বয়স থেকেই আমি টেনিস খেলি। ফলে স্কুলের অনেকে অন্য খেলা খেললেও টেনিসটাই আমি বেশি উপভোগ করেছি’, বলেন মাসফিয়া।
টেনিস খেলতে থাকা মাসফিয়ার হঠাৎই ছেদ পড়ে খেলায়। ইনজুরি তাকে পেছনে টানার চেষ্টা করলেও টেনিসের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করাতে পারেনি, ‘আরও অনেক দিন খেলার ইচ্ছে ছিল। ইনজুরির কারণে খেলা সেভাবে এগিয়ে নিতে পারিনি। তখন কোচিং স্টাফ হয়ে কাজ করেছি এরপর রেফারিংয়ে এসেছি।’
ঘরোয়া পর্যায়ে টুকটাক রেফারিং করেছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেফারিং করতে প্রয়োজন পরীক্ষায় পাশ। আইটিটিএফ লেবেল এক পরীক্ষা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় সবার মধ্যে নবীন হলেও ফলাফলে হয়েছেন প্রথম, ‘অনেক সিনিয়ররা ছিলেন, নতুন বিষয় ছিল। শুরুতে খানিকটা সংকোচ ছিলাম পরে দেখলাম আমি পারছি। শেষ পর্যন্ত ভালোই ফলাফল করছি’, বলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী রেফারি।
বছর তিনেক আগে ফুটবলে জয়া চাকমা প্রথম ফিফা নারী রেফারি হয়েছেন। ফুটবলের পর টেনিসেও পাওয়া গেল আরেক জয়া মাসফিয়াকে। সাবেক ফুটবলার জয়া চাকমার ফিফা রেফারি হওয়ার কীর্তি মাসফিয়াকে অনুপ্রাণিত করেছে যথেষ্ট, ‘নারী হিসেবে তার অর্জনটি আমাকে উৎসাহিত করেছে টেনিসেও এ রকম কিছু সম্ভব। আশা করি আমাকে অনুসরণ করে অন্যরাও এগিয়ে আসবে।’
এজেড/এনইআর