রাজশাহীতে হচ্ছে তৃতীয় বৃহৎ বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ঢাকা ও কক্সবাজারের পর রাজশাহীতে হচ্ছে দেশের তৃতীয় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। বিকেএসপি’র আওতায় রাজশাহীর অঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ আগামী জুন মাসে শেষ হবে। ইতোমধ্যে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) দেশের একমাত্র ক্রীড়া শিক্ষাকেন্দ্র। ঢাকার অদূরে সাভারের জিরানিতে ১১৫ একর জমিতে এই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। তবে সাভারের প্রধান কেন্দ্র ছাড়াও কক্সবাজারে ৩০ একর জমির ওপরে রয়েছে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র। আর রাজশাহীতে ১৭ একর জমির ওপরে নির্মাণ করা হচ্ছে আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও দিনাজপুরে রয়েছে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র। পাশাপাশি কক্সবাজারের রামু, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে আরো তিনটি কেন্দ্র সম্প্রসারণের অপেক্ষায় রয়েছে। বিকেএসপি চালু হলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা দেশের খেলাধূলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বিকেএসপি’র প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পর রাজশাহী গ্রিন-ক্লিন ও শিক্ষা নগরীর পাশাপাশি স্পোর্টস নগরীতেও পরিণত হবে। আর তাই এই প্রকল্পটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এর প্রস্তাবিত প্রকল্প, যেটি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় একনেকে পাস হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর পবা উপজেলার ফুকটিপাড়ার খিরসন মৌজায় ১৭ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে এই প্রতিষ্ঠান। যার অনুমোদিত ব্যয় ভূমি অধিগ্রহণসহ ১১০ কোটি। এই স্থাপনার মধ্যে রয়েছে- চার তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন ও প্রশিক্ষণার্থী হোস্টেল ভবন, পাঁচ তলা বিশিষ্ট অফিসার্স কোয়ার্টার, দুই তলা বিশিষ্ট ডরমেটরী ও মাল্টি স্পোর্টস ইনডোর ভবন, দুই তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, সীমানা প্রাচীর, সার্ফেস ড্রেন, ফুটবল ও ক্রিকেট প্যাভিলিয়ন ভবন, রাস্তা পিচসহ অত্যাধুনিক ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠ। বিকেএসপির রাজশাহীর স্কুলে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, শ্যুটিং, আর্চারি, জুডো, উশু, তায়কোয়ান্দো, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল, সাঁতার, জিমন্যাস্টিকস, বক্সিং, টেনিস, ভলিবল, কারাতে টেবিল টেনিস, গলফ, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভারোত্তলন, হ্যান্ডবল ও স্কোয়াশসহ ২৩টি খেলার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
বিকেএসপির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত অনুপ্রেরণায় ও দিকনির্দেশনায় আটটি বিভাগীয় শহরে বিকেএসপির প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে রাজশাহীতে পবা উপজেলার খিরসন মৌজায় ১৭ একর জমির ওপর গড়ে উঠতে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। যার অনুমোদিত ব্যয় ভূমি অধিগ্রহণসহ ১১০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এই ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন রাজশাহীতেই সবগুলো ইভেন্টের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা ২১ টি ক্রীড়া বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাবেন। বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাজশাহীতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, বক্সিং, টেনিস, কারাতে, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন ও হ্যান্ডবল ক্রীড়া বিভাগসমূহে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। দেশি-বিদেশি কোচেরা দক্ষ খেলোয়াড় তৈরি করবেন।
রাজশাহীর ক্রীড়াবিদ ও বিকেএসপির সিনিয়র টেনিস কোচ জাকির হোসেন জানান, রাজশাহীতে বিকেএসপির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীবাসীকে বিকেএসপি উপহার দিলেন। রাজশাহী একটা সম্ভাবনাময় জয়গা। এখানে বিকেএসপি হচ্ছে অনেক সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে, তারা সুযোগ পাবে। তারা নিজেদের জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেলে ধরবে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, বিকেএসপির আওতায় রাজশাহী ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভূমি অধিগ্রহণ। জটিলতার শতভাগ নিরসন করা সম্ভব হয়েছে- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সার্বিক সহযোগিতায় ও জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের দিকনির্দেশনায়। এই প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের শতভাগ ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ মে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন রাজশাহী বিকেএসপি'র নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ ছিলেন। তিনি খেলাধূলার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে খেলাধূলার কোনো বিকল্প নেই। একটি উন্নত রাষ্ট্র গঠন করতে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলায় উন্নয়ন করতে হবে।
শাহিনুল আশিক/এফআই