হাথুরুকে নিয়ে আশার ভেলা বিসিবির
২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন হাথুরু। ২০১৭ সালে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিদায় নিয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর আবারও ফিরছেন এই কোচ।
হাথুরুসিংহের নিয়োগের বিষয়টি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এরপর বিসিবির এক বিবৃতিতেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। জানা গেছে, অন্তত দুই বছরের চুক্তিতে বাংলাদেশ দলের তিন ফরম্যাটের কোচ হয়ে ফিরছেন হাথুরু।
দ্বিতীয় দফায় টাইগার শিবিরে লঙ্কান এই কোচের ফেরাটা কেমন হবে- জানতে চাওয়া হয়েছিল বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের কাছে। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপে বিসিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আশা করি তিনি ভালো করবেন। আগেও তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। এই দলটাকে চেনেন, খেলোয়াড়দের চেনেন, মাঠ চেনেন এবং পরিবেশ সম্পর্কে জানেন। আমরা আশা করছি হাথুরু ভালো করবেন। যদিও পাঁচ বছর পর সে আসছে, তবে আস্থা রাখছি তার ওপর।’
চলতি বছর ভারতের মাটিতে বসতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। সেসব চিন্তা থেকেই কি হাথুরুকে ফিরিয়ে আনা হলো, যেহেতু তিনি এশিয়ার কন্ডিশন সম্পর্কে অবগত? জালাল ইউনুস বলেন, ‘না, বিষয়টি এমন নয়। হাথুরুর সঙ্গে অনেকদিন আগে থেকেই কথা হচ্ছিল। শুধু বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে নয়, লম্বা সময়ের জন্য চিন্তা করেই তাকে আনা হয়েছে।’
সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাথুরুর দূরত্বের গুঞ্জন বহু পুরনো, এটা সত্য কি না জানতে চাইলে জালাল ইউনুস বলেন, ‘এসব ফালতু কথা।’
নিয়োগের আগে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচ ইস্যুতে কোনো কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জালাল ইউনুস বলেন, ‘কোনো সময় তো এভাবে কোচ নিয়োগ করা হয় না। যদি কয়েকজন ক্রিকেটারকে জিজ্ঞেস করা হতো একেক জনের একেক মত হতে পারতো। সুতরাং খেলোয়াড়দের মধ্যে যাদের যাদের জানা দরকার তাদের কয়েকজনকে জানানো হয়েছে। সিনিয়র ক্রিকেটাররা তো এটা পজিটিভই নিয়েছেন।’
বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্সের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের প্রধান আকরাম খান ঢাকা পোস্টকে হাথুরুর ফেরা প্রসঙ্গে বলেন, ‘হাথুরুর অধীনে আমরা খুব ভালো করেছি। কোচ হিসেবে তাকে আমার খুব ভালো লাগে। কারণ সে আমাদের সংস্কৃতির মতোই তো, মানে এশিয়ার মধ্যে। খেলোয়াড়দের আচরণ কিংবা ভাষা সে সবই বোঝে। এটা একটা বাড়তি পাওয়া। তার বড় গুণ হলো সে খেলোয়াড়দের থেকে পারফর্মেন্সটা বের করে আনতে পারে। তার সেই কোয়ালিটি রয়েছে। হাথুরুর সবচেয়ে বড় গুণ তার জবাবদিহিতা রয়েছে। আমার আন্ডারে যখন ছিলেন খেলোয়াড় ভালো করলেও বলতেন, খারাপ করলেও বলতেন। তার এই গুণটা ভালো।’
আগের মতো এবারও কি দলের মধ্যে কর্তৃত্ব থাকবে হাথুরুর? জবাবে আকরাম বলেন, ‘আমি তো অপারেশন্সে নেই। তবে নিশ্চয়ই তিনি সুযোগ পাবেন। কিন্তু তিনি যে ধরনের মানুষ, আমি শতভাগ নিশ্চিত যে এসব ক্লিয়ার করেই সে আসবেন। প্রত্যেকটা ব্যাপারেই তিনি স্পষ্ট থাকার চেষ্টা করেন। যতগুলো কোচ এসেছেন, আমি তো ৬ বছর নির্বাচক ছিলাম, ১২ বছর অপারেশন্সে ছিলাম, আমার কাছে মনে হয়েছে এই সময়ের মধ্যে দুই একজনের মধ্যে হাথুরু অন্যতম একজন।’
সহকারী কোচ হিসেবে কে থাকছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আকরাম বলেন, ‘এটা তো আসলে হাথুরুর ওপর নির্ভর করছে। তিনি যাকে পছন্দ করবেন এবং একইসঙ্গে বোর্ডের সিদ্ধান্ত তো রয়েছেই।’
বাংলাদেশ দলের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুলের কাছেও ঢাকা পোস্টের প্রশ্ন ছিল কেমন হবে হাথুরুর নতুন অধ্যায়। জবাবে তিনি বলেন, ‘ভালো করবেন আশা করি। মনে হয় বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই তাঁকে আনা হয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে তাঁর অধীনেই কিন্তু আমরা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিলাম। এবারও তিনি আসছেন, ভালোই হবে। আশা রাখি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবে ইনশাআল্লাহ।’
বিসিবির আরেক পরিচালক এবং নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম নাদেল ঢাকা পোস্টকে হাথুরু প্রসঙ্গে বলেন, তিনি আগে ছিলেন। এখন আবার নতুন করে আসছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে করি, আমাদের জন্য বা আমাদের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে। তিনি আগেও যখন ছিলেন তখনও কিন্তু আমরা অনেক ভালো অবস্থায় ছিলাম এবং আমি মনে করি, তার যেহেতু পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে তাতে তার ফেরাটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে। আমাদের খেলোয়াড়দেরও তিনি খুব ভালো করে চেনেন জানেন। এটাকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছুই করবেন।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সহকারী নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের কাছেও জানতে চাওয়া হয় হাথুরুর প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘এর আগেরবার যখন তিনি এসেছিলেন তখন বাংলাদেশ ভালো করেছিল। আশা রাখছি এবারও তার অধীনে বাংলাদেশ ভালো করবে।’
এসএইচ/এনইআর