পেলের মনে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ
মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিনকে বর্তমান প্রজন্ম চেনে রাজনীতিবিদ হিসেবে। মেজর হাফিজ এখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ক্রীড়াবিদ হিসেবেও রয়েছে তার বিশাল ব্যপ্তি। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান দলে খেলা হাফিজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের গণ্ডি পেরিয়ে ফিফার সাব কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন এক দশক। সেই সময় ফুটবলের রাজা পেলের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।
তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী পেলের সঙ্গে মেজর হাফিজের প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৮৪ সালে। সময়ের পরিক্রমায় ৩৮ বছর পেরিয়ে গেলেও পেলের সাক্ষাতের মুহুর্তটি এখনো তাজা হাফিজের মনে, ‘সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফা কংগ্রেস ছিল। সেই কংগ্রেসে ব্রাজিলের পেলে ও ইতালির দিনো জফকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। কংগ্রেস স্থলেই প্রথম পেলেকে দেখি। পেলেকে পেয়ে সবাই ছবি ও অটোগ্রাফের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।’
কংগ্রেসস্থলে ছবি ও অটোগ্রাফ নেয়ার সুযোগ পাননি হাফিজ। তার জন্য সন্ধ্যায় আরো ভালো কিছুই যে অপেক্ষা ছিল। ফিফা অতিথিদের জন্য নৌভ্রমণের ব্যবস্থা করেছিল। সেই নৌভ্রমণের মধ্যে আবার আতশবাজিও ছিল। আতশবাজির আলো আঁধারের খেলা মেজর হাফিজের পাশে বসেই উপভোগ করেন পেলে।
অন্ধকারের মধ্যেও পেলেকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন হাফিজ, ‘অন্ধকার ছিল এর মধ্যেও পেলেকে ঠিকই চিনেছিলাম। তার সঙ্গে আরো দুই জন সঙ্গী ছিলেন। তারা পেলের সঙ্গে আলাপ করছিলেন।’
আরও পড়ুন >>> পেলেও পারলেন না মৃত্যুকে ডজ দিতে
আতশবাজি শেষে নৌযানের আলো জ্বেলে উঠলে পেলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন, ‘আলো জ্বালার পর দেখি পেলে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে। আমি একজন সাবেক ফুটবলার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পরিচয় দিয়ে কথা বলি। তিনি বেশ আন্তরিকতার সঙ্গেই হেসে কুশল বিনিময় করেছিলেন।’
কুশলাদি বিনিময়ের পর হাফিজ পেলের অন্তরে খানিকের জন্য জায়গা করে নেন, ‘পেলের পরিবার তাকে ডিকো নামে ডাকে। আমার ছেলের নামও তার নেমে রেখেছি এটা তাকে জানাই। তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং তার পাশে থাকা দুই জনকে বলেন দেখো, ‘আমার নামে তার ছেলের নাম রেখেছে!’ নৌযানের মধ্যেই মেজর হাফিজ তার ক্যামেরা দিয়ে পেলের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি হন এবং পেলেও তার ক্যামেরা দিয়ে হাফিজের সঙ্গে ছবি তুলেন।
দশ বছর পর আবার পেলের সাক্ষাৎ পান হাফিজ। এবার অবশ্য ফিফার কংগ্রেসে নয়, বিশ্বকাপ ফুটবল আসরে। ১৯৯৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবল। সেই সময় ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য ছিলেন হাফিজ। আর ঐ বিশ্বকাপের বিশেষ দূত ছিলেন পেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের সেই সময় পেলের সঙ্গে একই হোটেলে ছিলেন হাফিজ, ‘আমেরিকা বিশ্বকাপে বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে। বিশ্বকাপের সময় ফিফার অফিস ছিল ডালাসে। ফিফার সেই অফিস ও হোটেল দুই জায়গাতেই তার দেখা পেয়েছি।’ সেই সফরে হাফিজের সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ে। পেলের সঙ্গে হাফিজের মেয়ে শামামারও রয়েছে স্মৃতি।
ফিফার আপিল ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য ছিলেন মেজর হাফিজ। ফিফার গুরুত্বপূর্ণ দু’টি কমিটির সদস্য থাকায় অনেক মহাতারকাকেই কাছ থেকে দেখেছেন এই সাবেক ফুটবলার। সবার মধ্যে পেলেকেই এগিয়ে রাখলেন বাফুফের সাবেক সভাপতি, ‘পুসকাস, লেভ ইয়াসিনও কিংবদন্তি। তাদের দেখাও পেয়েছি। তারা ইংরেজী না জানায় সেভাবে ভাববিনিময় হয়নি। পেলে দারুণ ইংরেজী জানেন। তার মধ্যে আলাদা একটি সম্মোহনী ক্ষমতা রয়েছে মানুষকে আকর্ষণ করার।’
যিনি ফুটবলকে এত জনপ্রিয় করেছেন। সারা বিশ্বে যার এত জনপ্রিয়তা সেই খেলোয়াড় পেলের চেয়ে হাফিজের চোখে ব্যক্তি পেলের অবস্থান আরো বেশি ঊর্ধ্বে, ‘সুইজারল্যান্ড ও আমেরিকা দুই জায়গায় দেখা হয়েছে। আমেরিকায় তো বেশ কাছাকাছি সময় কাটিয়েছি। সব সময় মুখে হাসি এবং বিনয়ী ভাব ছিল। কোনো সময় অহংকার চোখে পরিলক্ষিত হয়নি।’
পেলের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব বেশি মানুষের সাক্ষাৎ হয়নি। মেজর হাফিজ অত্যন্ত সৌভাগ্যবানদের একজন (সাবেক ফুটবলার গোলাম রব্বানী হেলালের সঙ্গে একটি ছবি রয়েছে পেলের)।
পেলের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো বাসায় বেশ যত্নেই রেখেছিলেন। যারা বাসায় আসতেন সবার চোখ সেদিকই পড়ত। এর ফলে সেই ছবি গায়েব, ‘অনেক দিন ধরে আমার সঙ্গে পেলের তোলা ছবিগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। বাসায় অনেকে আসেন, হয়তো নিয়েই গেছেন কেউ’–আক্ষেপ জড়ানো কণ্ঠে বলেন হাফিজ।
সাবেক এই ফুটবলার ও রাজনীতিবিদ একটি বই লিখেছেন। সেই বইয়ে তিনি ও তার মেয়ের সঙ্গে পেলের একটি ছবি রয়েছে। সেটিই এখন একমাত্র স্মৃতি।