বিদায় বলা সেই কিংবদন্তিরা
আরেকটি ইংরেজি নতুন বছর শুরুর সামনে। নতুন প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হবে ক্রীড়াজগতের এ নতুন বছর। অন্য সব ক্ষেত্রের মতো খেলার মাঠেও থাকবে অনেক উত্থান-পতন। আগের মতোই ঘটবে অনেক অঘটন। থাকবে সাফল্য-ব্যর্থতার অনেক গল্প। নতুন বছরে আসবেন অনেক নতুন তারকা। তেমনভাবেই অবসরও নেবেন অনেকে। ঠিক যেমনটা হয়েছে ২০২২ সালে। পৃথবীর হৃদয়বিদারক নিয়মগুলোর অংশ হিসেবে এ বছর খেলার মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এক ঝাঁক কিংবদন্তি।
রজার ফেদেরার
চোটের কারণে দীর্ঘদিন কোর্টের বাইরেই থাকতে হয়েছে রজার ফেদেরারকে। চোট সারিয়ে শেষবার কোর্টে নেমেছিলেন লেভার কাপে। তবে আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিকে টেনিসের চিরচেনা কোর্টে থাকছেন না আর। শেষবার খেলেছিলেন টিম ইউরোপের হয়ে সর্বাধিক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী রাফায়েল নাদালের সঙ্গে জুটি বেঁধে। কিন্তু সে ম্যাচে জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস তিয়াফো জুটির কাছে হেরেই বিদায় নিতে হয় ২০বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী তারকাকে।
সেরেনা উইলিয়ামস
মেয়েদের টেনিসে সবচেয়ে সফল সেরেনা উইলিয়ামসও বিদায় নিয়েছেন চলতি বছরে। দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থেকে ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যামের লক্ষ্যে নামেন ইউ এস ওপেনে। সেখানে হেরে যাওয়ার পর ডাবলসে নেমেছিলেন বোন ভেনাসের সঙ্গে জুটি বেঁধে। কিন্তু জেতা হয়নি তাও। এরপর মাঠ থেকেই অবসরে চলে যান ২৩ বারের সিঙ্গলস গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী কিংবদন্তি।
অ্যাশলে বার্টি
টেনিসের সবচেয়ে আলোচিত অবসর ছিল অ্যাশলে বার্টিরটা। মাত্র ২৬ বছর বয়সে আচমকাই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চলতি বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেতাব জেতেন বার্টি। সিঙ্গলসে এটা তার তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম। এছাড়াও ১৫টি সিঙ্গলস ও ১২টি ডাবলস শিরোপা জিতেছেন তিনি। এছাড়া অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ ও বিশ্বের ১ নম্বর টেনিস তারকা হওয়ার কীর্তিটাও আছে তার নামের পাশে।
ইয়ন মরগান
২০১৫ সালে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ বিদায়ের পর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটকে বদলে দিতে সবচেয়ে বেশি অবদান যার, তিনি ইয়ন মরগান। চলতি বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানো এ অধিনায়ক। চোট এবং খারাপ ফর্মের কারণেই গত জুনে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান বাঁহাতি এ ব্যাটার।
কায়রন পোলার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে প্রায় দেড় দশক ধরে সার্ভিস দেওয়া কায়রন পোলার্ডও অবসর গ্রহণ করেছেন ২০২২ সালে। চলতি বছরে আইপিএল চলাকালীন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না খেললেও বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলা চালু রেখেছেন ক্যারিবীয়ান এ অলরাউন্ডার।
মিতালি রাজ
মেয়েদের ক্রিকেটে ভারতকে বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখানো অধিনায়ক মিতালি রাজ অবসর নিয়েছেন চলতি বছরে। মেয়েদের ক্রিকেটে ভারতকে তিন ফরম্যাটেই নেতৃত্ব দেওয়া মিতালির আমলে ভারতের খেলা পরিবর্তন হয়েছে বহুগুণে। এছাড়া ইয়ক্তিগত অর্জনেও সবচেয়ে সমৃদ্ধ তিনি। ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর অবসরের সিদ্ধান্ত নেন মিতালি। বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করলেও আগামী বছর মহিলা আইপিএলে তার খেলার কথা রয়েছে।
ঝুলন গোস্বামী
ভারতের মেয়েদের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে খেলা ক্রিকেটার ঝুল গোস্বামী। দেখেছেন একসময়কার নড়বড়ে দলটার উত্থান পতন। অবশেষে ইতি টানলেন। মিতালির বিদায়ের কয়েক মাস পরই অবসর নেন ঝুলন। তবে ঘোষণা করার আগেই বিসিসিআই থেকে ঝুলনের ফেয়ারওয়েল ম্যাচের বন্দোবস্ত করে ফেলা হয়। ঝুলন গোস্বামীর দখলেও আছে একাধিক রেকর্ড। বিশেষ করে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট এবং ১০ হাজারের বেশি ডেলিভারির মতো রেকর্ড আছে তার। ইংল্যান্ডের মাটিতে স্ক্যাভিয়েরদের ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে ঝুলনের বিদায় মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখে ভারতীয় দল।
জেরার্ড পিকে
চলতি বছর ফুটবল অঙ্গনে অনেক বেশি আলোচনায় ছিলেন জেরার্ড পিকে। তবে সেটা যতটা না তার ফুটবলের কারণে তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। এ বছরই কলম্বিয়ান গায়িকা শাকিরার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় পিকের। এর কয়েক মাস পড়ে হুট করেই ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। দীর্ঘদিনের ক্লাব বার্সেলোনার জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচটি খেলেছেন লা লিগায় আলমেইরার বিপক্ষে। ফুটবল ক্যারিয়ারে অজস্র শিরোপা জিতেছেন পিকে। তালিকায় আছে ফিফা বিশ্বকাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ ও লা লিগার শিরোপা।
করিম বেনজেমা
ফুটবল ক্যারিয়ারে স্বপ্নের মতো সময় কাটিয়েছেন গত দুই বছর। রিয়াল মাদ্রিদকে ইউরোপসেরার খেতাব জিতিয়ে প্রথমবারের মতো জিতেছেন ব্যালন ডি'অর। তবুও খেলতে পারেননি বিশ্বকাপে। ইনজুরির কারণে শুরুর দিকে ছিটকে গেলেও ফাইনালে অ্যাভেইলেবল ছিলেন। কিন্তু কোচ দিদিয়ের দেশম রাখেননি সেরা একাদশে। তাই অনেকটা অভিমান করেই বিদায় নিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে না খেললেও বেনজেমা থাকছেন ক্লাব ফুটবলে।
ফুটবল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরও অনেক কিংবদন্তি। বেলজিয়ামের ইডেন হ্যাজার্ড, তিউনিসিয়ার ওয়াগবি খাজরি, স্পেনের বুস্কেটস ও ক্যামেরুনের গোলকিপার আন্দ্রে ওনানাসহ বেশ কয়েকজন ফুটবলার বিশ্বকাপ শেষ হতেই আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন।
এনইআর/এটি