মেসিদের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনার পিঠে আছে শঙ্কাও
আবারো এক চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলর মঞ্চ, আবারো সেই পিএসজি-বার্সেলোনা। কাকতালীয়ভাবে পরিস্থিতিটাও কিছুটা এক। পরের পর্বে যেতে হলে একটা ‘প্রত্যাবর্তন’ চাই বার্সেলোনার। তবে কাজটা করতে হবে প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রথম লেগে তিন গোলে হেরে প্রতিপক্ষের মাঠে প্রত্যাবর্তনের নজির নেই আর একটিও। সঙ্গে যখন যোগ হয় দলের মূল খেলোয়াড়দের চোট, তখন কাজটা অসম্ভবের চেয়েও বেশি কিছুই হয়ে পড়ে।
কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে মেসিদের করতে হবে কমপক্ষে চার গোল৷ হজম করা চলবে না একটির বেশি গোল। মূল সময় শেষে ফলটা ৪-১ হলে খেলা গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে।
আর এ সমীকরণটা কোম্যানের শিষ্যদের মেলাতে হবে পিএসজির মাঠে। প্রতিপক্ষের ডেরায় হেরে এসে ঘরের মাঠে প্রত্যাবর্তনের নজির বার্সারই আছে দুটো, শেষটা '১৭ সালে, এই পিএসজির বিপক্ষেই। তবে এর উল্টোটার নজির খুব কম। আর প্রথম লেগে যদি হারটা হয় তিন গোলের ব্যবধানে, তাহলে দ্বিতীয় লেগে ‘কামব্যাকের’ নজির নেই আর একটিও।
চলতি মাসের শুরুতেই অবশ্য সেভিয়ার বিপক্ষে কোপা দেল রের সেমিফাইনালে আরো একটা ‘কামব্যাকের’ কীর্তি গড়েছে কোচ রোনাল্ড কোম্যানের শিষ্যরা। তবে তার সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মেলানো ঠিক হবে না আদৌ। কোচ কোম্যানও জানালেন, সেভিয়ার সঙ্গে এই ম্যাচের তুলনা হয়না।
তবে ম্যাচের চিত্রটা অন্যরকমও হতে পারে। মেসিরা যেমনটা চাইছেন তার ঠিক উল্টো। শেষ কিছু ম্যাচে দলের নিখুঁত রক্ষণে বড় অবদান ছিল জেরার্ড পিকের। সেই পিকে চোট পেয়ে চলে গেছেন মাঠের বাইরে। রক্ষণভাগে তার আরেক সঙ্গী রোনাল্ড আরাউহোও এক ম্যাচ আগে পেয়েছেন চোট, নেই আজকের ম্যাচেও। ফলে কোচ কোম্যানকে আস্থা রাখতে হচ্ছে নড়বড়ে স্যামুয়েল উমতিতি আর ক্লেমেন্ত লংলের ওপর।
সঙ্গে যদি যোগ হয় শুরু থেকে অতি আক্রমণাত্মক মানসিকতা আর কৌশল, তাহলে প্রতি আক্রমণে কিলিয়ান এমবাপের গতির কাছে ধরাশায়ী হয়ে আরও গোল হজমের শঙ্কাটাও থেকে যায়। সেটা হলে যে আরও একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে দলটিকে, তা বলাই বাহুল্য।
সেসব সম্ভাব্য দুর্দশা একপাশে রাখলে, শেষ একটা সপ্তাহ দারুণ কাটিয়েছে দলটি। সেভিয়ার বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনে কোপা দেল রের ফাইনাল নিশ্চিত করা, রিয়াল-অ্যাটলেটিকোর ড্রয়ে টেবিলের দুইয়ে সুসংহত হওয়া কিংবা নতুন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার ‘ফেরা’, সব মিলিয়ে শেষ কয়েক মাসে সবচেয়ে ভালো সময়টা পার করেছেন মেসিরা। সে ইতিবাচক পরিবেশটাকে যদি মাঠেও নিয়ে যাওয়ার আশায় প্যারিসে পা রেখেছে বার্সা।
বলছেন তারা
অবধারিতভাবেই বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান পরিস্থিতিটাকে পরিবর্তন করতে চাইলেন। কিন্তু তা করতে হলে দলকে পূরণ করতে হবে শর্তও। কী সেই শর্ত?
আশা করছি প্রথম লেগ থেকে এটা ভিন্ন হবে। আর এটা নির্ভর করবে আমরা কেমনভাবে ম্যাচটা শুরু করব, প্রতিপক্ষের কাজটাকে কঠিন করার জন্য কতটা প্রাণশক্তি ঢেলে দেব তার ওপর। প্রথম লেগে তারা সব সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। এবার আমাদেরকেও তাই করবে হবে। আমরা এমন এক দল যারা সবসময় সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। যদি তা কাজে লাগাতে পারি তাহলে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়।
রোনাল্ড কোম্যান, কোচ, বার্সেলোনা
সাবেক সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা আবারও ফিরেছেন ক্লাবের মসনদে। কোচ কোম্যান জানালেন, তার ফেরাটাও দলকে দিচ্ছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। বললেন, ‘অতীতে অনেকবার আমি ও লাপোর্তা একে অন্যকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আর ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের সুবাদে জেনেছি, লাপোর্তা খেলোয়াড়দেরকে অনেক আত্মবিশ্বাস দেন। কোচ আর খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে বড় ভূমিকাই পালন করেন তিনি। লাপোর্তা আমাদের ড্রেসিংরুমে এসেছিলেন আর এখানে অনেক ভালো একটা পরিবেশ ছিল, তিনি অল্পসল্প কিছু কথা বলেছিলেন।’
এদিকে প্রথম লেগে বড় জয়ের পরেও পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো একটু অস্বস্তিতেই আছেন। কারণটা যে ২০১৭ সালে বার্সেলোনার সেই অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন, তা আর না বললেও চলে। তবে তেমন কিছু এবার হতে দিতে চান না পিএসজির বর্তমান কোচ।
আমাদের ক্লাবের লক্ষ্য জয়, এটা পরিষ্কার। কিন্তু অনেক দলই আছে যারা এটা জিততে চায়, কাজটা সহজ নয় মোটেও। আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত আছি আর এজন্য আমাদেরকে প্রাণপণে লড়তে হবে।
মরিসিও পচেত্তিনো, কোচ, পিএসজি
সাম্প্রতিক ফর্ম
বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের শেষ সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে। তবে হেরেছে সর্বশেষ দু’টিতেই। আর পিএসজির বিপক্ষে প্রথম লেগের হারের পর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত দলটি। আর লিগে সর্বশেষ ১৫ ম্যাচ ধরে অপরাজিত আছে দলটি।
অন্যদিকে পিএসজি বার্সেলোনার বিপক্ষে জয়ের পর হারের কবলে পড়েছিল পরের ম্যাচেই। এরপর অবশ্য টানা তিন ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছেন এমবাপেরা।
মুখোমুখি লড়াইয়ে
নিজেদের ইতিহাসে ১৪তম লড়াইয়ে নামছে বার্সা ও পিএসজি। এর আগের নয়টিই হয়েছে ২০১২-১৩ মৌসুমের পর। এ সময়ে এর চেয়ে বেশি মুখোমুখি হওয়ার ইতিহাস আছে কেবল রিয়াল মাদ্রিদ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের (১০ বার)।
পিএসজির বিপক্ষে কাতালানরা ৫বার শেষ হাসি হেসেছে, আর পিএসজি চার ম্যাচে হারিয়েছে বার্সাকে। বাকি চার ম্যাচ শেষ হয়েছে সমতায়।
দলের খবর
বার্সেলোনা: আগেরবারের অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তনের অন্যতম নায়ক সার্জি রবার্তো নেই। সঙ্গে ফেলিপে কৌটিনিয়ো, জেরার্ড পিকেও। রোনাল্ড আরাউহো চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরলেও স্কোয়াডেই তাকে রাখেননি কোচ রোনাল্ড কোম্যান।
পিএসজি: নেইমার ফিরেছেন চোট থেকে। তবে তাকেও কোচ পচেত্তিনো রাখেননি স্কোয়াডে। আরেক ফরোয়ার্ড মইস কিনও নেই একই কারণে।
সম্ভাব্য একাদশ
বার্সেলোনা: স্টেগেন; মিনগেসা, লংলে, উমতিতি; ডেস্ট, ডি ইয়ং, বুসকেটস, আলবা, পেদ্রি; মেসি গ্রিজমান।
পিএসজি: নাভাস; ফ্লোরেঞ্জি, মারকিনিয়োস, কিম্পেম্বে, কুরজাওয়া; গেই, পারেদেস; ডি মারিয়া, ভেরাত্তি, এমবাপে, ইকার্দি।