এমনও সুন্দর ফুটবল হয়!
ভয়ঙ্কর সুন্দর! দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল যেমন খেলল, তা দেখে ফুটবল-ভক্ত মাত্রেই মুখ থেকে অস্ফুটে এমন কথা বেরিয়ে আসাটা খুবই সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যে নেইমার, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রিচার্লিসন, রাফিনিয়ারা রীতিমতো সুন্দর ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন!
ব্রাজিল ৪-১ গোলে জিতেছে। প্রতিপক্ষ গোলমুখে নেইমারদের ১০ শট জানান দিচ্ছে, স্কোরলাইনটা আরও বড়ও হতে পারত। ক্যামেরুনের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হারের পর এমন পারফর্ম্যান্স খুবই প্রয়োজন ছিল তিতের দলের। সেটা তো ব্রাজিল করেছেই, বিশ্বকাপে টিকে থাকা আর সব দলকে একটা বার্তাও দিয়ে বসেছে। সেই বার্তাটা এতক্ষণে আপনারও বোঝা হয়ে গেছে বৈকি!
পুরো ম্যাচে নয় অবশ্য, ব্রাজিল ছড়ি ঘুরিয়েছে প্রথম ৪৫ মিনিটে, শুরুর অর্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। আক্রমণ শানিয়েছে মুহুর্মুহু। সেসব বাদ, শুধু গোলগুলোর দিকেই তাকান! শুরুর গোলে রাফিনিয়া ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠলেন লুকাস পাকেতার সঙ্গে দারুণ একটা ওয়ান-টু খেলে।
আরও পড়ুন : ফুটবল তারকা : যাদের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যে
বক্সের জটলায় মাঝ দিয়েই বলটা পাঠালেন ভিনিসিয়াসের কাছে। রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড সেটা আয়ত্বে নিলেন, একটু অপেক্ষা করলেন, এরপর ঠাণ্ডা মাথায় করলেন শট, যেটা কোরিয়ান রক্ষণ তো বটেই, গোলরক্ষক কিম সিউং-গিউরও ধরার উপায় রইল না।
নেইমারের পেনাল্টিটা নিয়েও কথা হতে পারে। ছোট্ট একটা বডি ডজে গোলরক্ষককে পাঠিয়েছেন ভুল পায়ে, নিয়েছেন মাপা এক শট, যাতে শক্তি দেননি খুব একটা। কোরিয়া গোলরক্ষক ধরতে পারেননি সেটাও।
এরপরই এলো তৃতীয় গোলটা। রিচার্লিসন প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক সাইড ভলিতে গোল করে টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সেরা গোলটা করে ফেলেছেন। তবে সেটাকে যদি টুর্নামেন্টের সেরা গোল ভেবে থাকেন, তাহলে এই গোলটা দেখে আপনি আপনার ভাবনাটা বদলেও ফেলতে পারেন। বক্সের সামনে বল পেলেন, বারতিনেক মাথা ছুঁইয়ে আয়ত্বে নিলেন। মাটিতে পড়ার আগেই বলটা রুখলেন পা দিয়ে, পেছনে থাকা মারকিনিয়োসকে পাস দিলেন, এরপর বলটা গেল থিয়াগো সিলভার কাছে। ততক্ষণে বক্সে মাপা দৌড় দিয়ে রিচার্লিসন পৌঁছে গেছেন দুই ডিফেন্ডারের ফাঁকে, অফসাইডের কাটা এড়িয়ে থিয়াগোর পাসটা নিলেন, প্রথম ছোঁয়াতে করলেন গোল।
এ এক গোল এমনই ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করল স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ, কোচ তিতেও যাতে মোহাবিষ্ট হলেন। প্রতি গোলের পরই নেইমাররা নেচেছেন নিজ নিজ ঢঙে। কিন্তু কোচ তিতেও এসে যোগ দিয়েছেন নাচে, এমনটা সম্ভব করেছিল রিচার্লিসনের গোলটাই।
পুরো ম্যাচেই ছোট ছোট দ্রুতলয়ের পাসে আক্রমণ শানিয়েছে ব্রাজিল। শেষ গোলটাতেও রইল তার ছোঁয়া। রিচার্লিসন, নেইমার হয়ে শেষে ভিনিসিয়াসের কাছে গেল বল, তিনি ছোট্ট একটা লবে ছয় গজের বক্সের বাইরে ‘লেট রান’ নিয়ে আসতে থাকা পাকেতাকে দেন বলটা। ওয়েস্ট হ্যাম মিডফিল্ডার যেভাবে ফিনিশটা করলেন, সেটা দেখলে অনেক ফরোয়ার্ডের মনেও ঈর্ষা জাগতে পারে। ৩৫ মিনিটে ম্যাচের চতুর্থ গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল।
আরও পড়ুন : অর্থনীতির বিশ্বকাপ!
ম্যাচটা কার্যত শেষ সেখানেই। পরের অর্ধটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র৷ সে আনুষ্ঠানিকতাটা সারতে সারতে একটা গোল দিয়েছে কোরিয়া। তবে তাতে ব্রাজিলের দাপটের দৃশ্যটা বদলে যায়নি একটুও। সেলেসাওদের সুন্দর ফুটবলেও কালিমা লাগেনি, সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের প্রতি বার্তার তীব্রতাটাও কমেনি।
এমন পারফর্ম্যান্সের পরও ব্রাজিল উদযাপন করেনি। শেষ দিকে উঠে যাওয়া নেইমার ম্যাচ শেষ হতেই দৌড়ে গেলেন মাঠে। গেলেন বাকি সবাইও। হাতে উঠে এলো একটা ব্যানার, যাতে বড় করে লেখা স্রেফ একটা শব্দ ‘পেলে!’ সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে থাকা কিংবদন্তিকে নেইমাররা জানালেন শ্রদ্ধা।
পেলে অবশ্য ম্যাচের আগেই জানিয়েছিলেন দলের প্রতি সমর্থনটা। বলেছিলেন, সেখান থেকেই দলকে ভালোবাসা বিলিয়ে যাবেন, খেলাও দেখবেন। ব্রাজিলের এমন পারফর্ম্যান্স যে তারও মন ভোলাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই!