ভলান্টিয়ারিংই তাদের নেশা
কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু লুসাইল স্টেডিয়াম। ফাইনালসহ সর্বাধিক ১০ টি ম্যাচ লুসাইলে। সেই স্টেডিয়ামের দর্শক ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন বাংলাদেশের ফিফা ভলান্টিয়ার করবেন রেজাউল হোসাইন অনীক।
লুসাইল স্টেডিয়ামে দায়িত্ব পেয়ে খুবই খুশি অনীক, ‘রাশিয়া বিশ্বকাপেও আমার ভলান্টিয়ারিং প্রায় নিশ্চিত ছিল। সেখানে আমি শুধু মস্কো ও পিটার্সবার্গেই কাজ করতে আগ্রহী ছিলাম। হয়তো এজন্য আর চূড়ান্ত ডাক পাইনি। এবার আর ভেন্যু নিয়ে তেমন কিছু বলিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর দেখলাম আমার দায়িত্ব পড়েছে লুসাইলেই। গত বার মস্কো চেয়েছিলাম ফাইনালের জন্য, ভাগ্যে ছিল না। এবার ভাগ্যে ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যুই রেখেছে।’
২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে অনুপস্থিত থাকলেও ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ছিলেন অনীক। সেই বছর তিনি মারাকানা স্টেডিয়ামের দায়িত্বে ছিলেন। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো যেমন বাছাই-প্রাক বাছাই খেলে মূল পর্বে আসে। ভলান্টিয়ারদেরও উতরাতে হয় কয়েকটি ধাপ। যোগ্যতা-সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর নামতে হয় তাদের অর্থসংস্থানের যুদ্ধে।
অনেক স্বাগতিক আবাসন ও খাবার বন্দোব্যস্ত করলেও বিমান ভাড়াটা ভলান্টিয়ারদেরই বহন করতে হয়। অনেক স্বাগতিক আবার আবাসনের ব্যবস্থাও করে না। তখন আবার খরচ বাড়ে বহুগুণে। এবার বাংলাদেশের ফিফার ৮ ভলান্টিয়ারের মধ্যে কয়েকজনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংস, ‘বসুন্ধরা কিংস বিমান ভাড়ার পাশাপাশি কিছু আর্থিক প্রণোদনাও দিয়েছে। ফলে এবার আমাদের পথটা অনেকটা মসৃণ হয়েছে।’ -বেশ তৃপ্তির সঙ্গে বলেন অনীক। বসুন্ধরা কিংস পৃষ্ঠপোষকতা করায় কয়েকজন ভলান্টিয়ার বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সির সঙ্গে কিংসের জার্সি পড়েও ব্র্যান্ডিং করবেন।
ছয় বছর আগে ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ভলান্টিয়ার ছিলেন পিয়াল রেজোয়ান। অলিম্পিকের মতো আসরে ভলান্টিয়ারের জন্য নির্বাচিত হয়েও তার ব্রাজিল যাত্রা ছিল অনিশ্চিত। সেই সংগ্রামের মুহূর্তগুলো স্মরণ করলেন এভাবে, ‘ব্রাজিলের বিমান ভাড়াই ছিল দুই লাখের বেশি। আনুষাঙ্গিক আরো খরচ তো ছিলোই। এত টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি কয়েকজন চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জামিলুর রেজা চৌধুরি স্যার এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠি নিয়ে যাওয়ার পর এনভয় আমাকে স্পন্সর করায় অলিম্পিকে যেতে পারি।’
অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমসে ভলান্টিয়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও বিশ্বকাপ ফুটবলে এবারই প্রথম পিয়াল। তাই কাতারের দোহায় পা দিয়েই তার বিশেষ অনুভূতি,‘অলিম্পিক করেছি আগে, কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না, বিশ্বকাপ বিশ্বকাপই।’
ব্রাজিলের তুলনায় কাতার অনেকটা ভলান্টিয়ার বান্ধব মনে করেন পিয়াল ও অনীক দুইজনই, ‘ব্রাজিলে শুধু ম্যাচের দিন যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল। থাকার ব্যবস্থাও তারা সেভাবে করেনি। কাতার অবশ্য আমাদের জন্য দারুণ ব্যবস্থা করেছে। খুবই ভালো মানের হোটেলে রেখেছে। পাশাপশি অন্য সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছে।’
বিশ্বকাপের অন্যতম প্রাণ ভলান্টিয়াররা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিশ্বকাপের আয়োজন সফল ও সার্থক হয়। আর মাত্র দিন তিনেক পরেই শুরু গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। এখন থেকেই সক্রিয় ভলান্টিয়াররা। কাতার বিশ্বকাপে ফিফার কয়েক হাজার ভলান্টিয়ারের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছেন ৮ জন।
বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো মহাযজ্ঞে থাকতে পেরে খুবই খুশি বাংলাদেশের ভলান্টিয়াররা, ‘বিশ্বকাপের মূল পর্বে আমরা খেলতে পারি না। এরপরও বিশ্বকাপের সঙ্গে যেভাবেই হোক আমাদের দেশকে সম্পৃক্ত করতে পেরে গর্বিত।’ বাকি সাত জনের প্রথম ফিফা ইভেন্ট হলেও অনিকের এটি দ্বিতীয় ফিফা বিশ্বকাপ ভলান্টিয়ারিং।
ফিফার সরাসরি তত্ত্বাবধান ছাড়াও স্বাগতিক কাতার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভলান্টিয়ার নিয়োগ দিয়েছে। কাতারের নিয়োগকৃত ভলান্টিয়ারের মধ্যেও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি রয়েছে।
এজেড/এটি/এনইউ