কেঁদে-কাঁদিয়ে ফেদেরারের বিদায়
‘আরও কিছুক্ষণ কি রবে বন্ধু? আরও কিছু কথা কি হবে?’ – জেমসের এ গানটা যে রাফায়েল নাদাল শোনেননি, তা প্রায় বাজি ধরেই বলা যায়। তবে ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ রজার ফেদেরারের বিদায়বেলায় যেভাবে হাপুস নয়নে কাঁদছিলেন রাফা, তাতে গানের দুই লাইন অন্য কোনো রূপে যে তার মগজে খেলে যাচ্ছিল, তা হলফ করেই বলা যায়।
শুধু রাফা নন, লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় লেভার কাপের ম্যাচ খেলতে, দেখতে হাজির সব খেলোয়াড়-দর্শক সবারই তো প্রায় একই অবস্থা হয়ে গিয়েছিল! টেনিস কিংবদন্তি রজার ফেদেরার বিদায় নিচ্ছেন, তার আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছিল প্রায় সবাইকে। এমনকি ‘জোকার’ ডাকনামে পরিচিত যে নোভাক জকোভিচ, সেই তিনিও তো চোখ মুছলেন একটু আড়ালে!
জন ম্যাকেনরোর চোখে যিনি ‘সবচেয়ে সুন্দর টেনিস উপহার দেওয়া একজন’, কিংবদন্তি বিয়ন বোর্গ যার মতো টেনিস খেলার ইচ্ছা পোষণ করেন এখনো, সেই ফেদেরারই ছেড়ে যাচ্ছেন টেনিস কোর্ট! তার বিদায়ের দিনে লেভার কাপের কোর্টে যেন রীতিমতো আবেগের বিস্ফোরণই ঘটে গেল!
আর যিনি বিদায় নিচ্ছেন? সেই রজার ফেদেরার? তিনিও কেঁদেছেন বাচ্চা ছেলের মতো। একটু সামলে নিলেন এরপরই। পুরো কোর্ট ঘুরলেন। হাত নেড়ে দর্শকদের ধন্যবাদ জানালেন। শেষে নাদাল, জোকোভিচদের কাঁধে চড়ে নিলেন বিদায়।
বেদনার রঙ নাকি নীল, সেই নীল রঙেই শনিবার রাতে সেজেছিল লন্ডনের ও২ অ্যারেনা। সেই আবহে বিদায়বেলায় যখন ফেদেরার কাঁদলেন সবান্ধবে, তখন সেটা বেদনার কান্না বলে মনে হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়।
ফেদেরার সে ‘ভুলটা’ ভাঙলেন। জানালেন, এই অশ্রু আসলে আনন্দের। বললেন, ‘আমি সুস্থ আছি, সুখে আছি, সবকিছু চলছে ভালোই। আর এটা তো একেবারে শেষও নয়! আপনি জানেন, জীবন তার নিজের গতিতেই বয়ে চলে!’
ফেদেরার যতই আনন্দ-অশ্রুর কথা বলুন, বাকিদের ভেতর ভেতর যে বেদনার বিউগলই বেজে চলেছে, তা টের পাওয়া গেল নাদালের কথায়। ‘রজার চলে যাচ্ছে, সাথে করে আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশও নিয়ে যাচ্ছে।’ –কথাটা যখন বলে শেষ করলেন, ডার্ক নাইট সিনেমায় জোকারের ব্যাটম্যানকে বলা বিখ্যাত উক্তিটাও মনে পড়ে যাওয়ার কথা আপনার। যেখানে বলেছিলেন, ‘তোমাকে ছাড়া আমি কী করতাম? তুমিই তো আমাকে পরিপূর্ণ করো!’
২০০৫ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে ফেদেরারকে হারিয়ে নাদালের পাদপ্রদীপের আলোয় আসা। এরপর থেকে একে অপরের মুখোমুখি কতবার হয়েছেন, কত মহাকাব্যিক সব লড়াই হয়েছে দু’জনের… সেসব ফেদেরার না থাকলে নাদাল পেতেন?
নাদালের ভাষায়, ফেদেরার তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টেনিসেরও কম কী? এখন নাদাল-জকোভিচরা তাকে ছাড়িয়ে গেলেও, ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনিই যে ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামের গেরো খুলেছেন, দুই গ্র্যান্ড স্ল্যামে ১০০’রও বেশি জয়, এটিপি র্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় সবচেয়ে বেশি দিন থাকার রেকর্ড… এ সব কিছু তার দখলে।
এ তো গেল অর্জনের ফিরিস্তি, টেনিস কোর্টে শিল্পিত সব শটে কি দারুণ রোমাঞ্চই না ছড়িয়েছেন ২৪টা বছর! তাই তো বিয়ন বোর্গ তার মতো করে খেলার ইচ্ছা পোষণ করেন এই বুড়ো বয়সে এসেও!
সেই একজনের বিদায়ে টেনিসে একটা অধ্যায়ের সমাপ্তিই টেনে দিল বৈকি! ফেদেরার যতই বলুন তার অশ্রু আনন্দের, কোর্টে হাজির সবার, বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় সব টেনিস ভক্তের মন তার বিদায়ে পুড়ছে বেদনার আগুনেই।
এনইউ/এটি