যে যুক্তিতে বিশ্বকাপ দলে নেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
রাজধানীতে দুদিন ধরেই ঝরছে বৃষ্টি! ভাদ্রের শেষে এমন বৃষ্টিস্নাত দিনে নিজেকে সবচেয়ে দুঃখী এক মানুষ ভাবতেই পারেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ! তার যে বিশ্বকাপ মিশনে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া হচ্ছে না। তাকে বাদ দিয়েই বুধবার আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যর দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ঘোষিত এই দলটিই খেলবে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
রিয়াদ যেখানে দলে নেই সেখানে বিস্ময় হয়ে সাকিব আল হাসানদের সঙ্গী হচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত । কোনো কিছু না করেই আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়ে গেলেন তিনি। এই বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানই ঘোষিত দলের বড় চমক!
আরও পড়ুন : চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ দলে শান্ত, নির্বাচকরা বলছেন ভিন্ন কথা
এমনিতে গত এশিয়া কাপের দল থেকে মাহমুদউল্লাহ ছাড়াও বাদ পড়েছে দুই ওপেনার এনামুল হক ও পারভেজ হোসেন ইমন ওঅফ স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান। চোট কাটিয়ে দলে ফিরলেন লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলি চৌধুরি ও হাসান মাহমুদ।
মুশফিকুর রহিম অবসর নিয়ে নির্বাচকদের নির্ভার করলেও রিয়াদ অপেক্ষায় ছিলেন। ভেবেছিলেন হয়তো ডাক মিলবে বিশ্বকাপ দলে। কিন্তু সুযোগ হলো না। ৩৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডারকে ছাড়াই ঘোষণা করা হলো দল।
আরও পড়ুন : এই দেশে যোগ্য লোকের মূল্যায়ন হয় না, হবেও না : রিয়াদের স্ত্রী
মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু অবশ্য নিজেদের কোর্টে বল রাখেন নি। দায়ও নিতে চাননি। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দেখুন, মাহমুদউল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, সে আমাদের অনেক ভালো ভালো খেলা উপহার দিয়েছে। আমাদের বর্তমান যে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট, তিনি এক বছরের যে পরিকল্পনা আমাদের দিয়েছেন, সেটা মাথায় রেখে আমরা এগোচ্ছি। সেই অনুযায়ী টিম ম্যানেজমেন্টের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সকলের সম্মতিতে মাহমুদউল্লাহকে বাইরে রাখা হয়েছে।’
তার মানে ধরে নেওয়া যায় রিয়াদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটাই শেষ! তার আর এই ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হচ্ছেই না!
আরও পড়ুন : মাহমুদউল্লাহকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা
দল ঘোষণার আগে প্রশ্ন ছিল একটাই - রিয়াদ কি থাকছেন ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলে? মাস দুয়েক আগেও যদি কেউ এমন প্রশ্ন তুলতো, তাহলে নিশ্চয়ই অবাকই হতেন আপনি। কারণ তিনি যে তখন দলের অধিনায়ক! সদ্য সাবেক হয়েই কি-না জায়গাটাও টলমলে হয়ে যায় তার। টিম ম্যানেজম্যান্ট পড়ে অদ্ভুদ এক সঙ্কটে। না পারছে ধরতে, না পারছে ছাড়তে!
মাঠে ব্যাট হাতে তার বাজে পারফরম্যান্সই সর্বনাশ করে দিয়েছে। উঁচু গলায় তার হয়ে কথা বলার মানুষটিও নেই। খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দেওয়ার পথ খুঁজছেন। তারমধ্যে টিম কম্বিনেশনের কথা ভেবেই অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে রিয়াদের জায়গা পাননি নির্বাচকরা। সঙ্গে ভবিষ্যতের একটা ভাবনা তো ছিলই!
আরও পড়ুন : শান্তকেই খুঁজছিলেন শ্রীরাম
১২১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৩.৫ গড়ে ২১২২ রান (বাংলাদেশের হয়ে যেটি সর্বোচ্চ) করা রিয়াদকে দলে রাখলে যাই করা হোক সমালোচনা হতোই। না রাখাতেও হচ্ছে। কোন যুক্তিতে শান্ত দলে সেটা মেলাতে হিমশিম খাওয়া অনেকেই আবার বলছেন রিয়াদ থাকলে মন্দ হতো কী! তাছাড়া সাকিবের সঙ্গে তিনি ছাড়া দলে আর সিনিয়র কে আছে? অথচ নাজমুল হাসান শান্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৯ ম্যাচে ১৮.৫০ গড়ে ১৪৮ রান তুলেই কীনা সুযোগ পেয়ে গেলেন! রিয়াদ নিজেকে দুভার্গা ভাবলে শান্ত নিজেকে ভাবতে পারেন সবচেয়ৈ সৌভাগ্যবান!
কিন্তু ভবিষ্যত ভাবনায় শান্ত কিংবা সাব্বিরের মতো অফ ফর্মে থাকাদেরও সুযোগ দিতে চায় বিসিবি। সেই ভাবনাতেই আসলে শেষ হয়ে গেলো রিয়াদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার!
আরও পড়ুন : এই দেশে যোগ্য লোকের মূল্যায়ন হয় না, হবেও না : রিয়াদের স্ত্রী
২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশন শুরু। ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচ ২৭ অক্টোবর সিডনিতে। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্রিসবেনের গ্যাবায় ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ লড়বে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে। অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের শেষ দুটি ম্যাচ খেলবে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২ নভেম্বর ভারত ও ৬ নভেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই সাকিবদের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দল
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, ইয়াসির আলি চৌধুরি, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, নাসুম আহমেদ, ইবাদত হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত।
ফিরেছেন: লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলি চৌধুরি রাব্বি, হাসান মাহমুদ, নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাদ: মাহমুদউল্লাহ, এনামুল হক, মুশফিকুর রহিম, পারভেজ হোসেন ইমন, শেখ মেহেদি হাসান।
স্ট্যান্ডবাই: শরিফুল ইসলাম, সৌম্য সরকার, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান।
এটি