ইস্তাম্বুলের ‘অভিজাত’ ক্লাব বেসিকতাস
ইস্তাম্বুল শহর এমনিতেই আভিজাত্যপূর্ণ। সেই শহরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা বেসিকতাস। কাটাবাস ট্রাম স্টেশন থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই বেসিকতাস এলাকা। বেসিকতাসের ভোডাফোন পার্ক স্টেডিয়াম ঘিরেই এই আভিজাত্য এলাকা।
বেসিকতাস এলাকায় শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ অনেকের গায়েই দেখা গেল দলের টি-শার্ট। বসফরাস নদীর একদম উল্টো দিকেই বেসিকতাসের স্টেডিয়াম। ক্লাবটির সমর্থকরা বিকেলে ক্লাব প্রাঙ্গণে বসে বসফরাসের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। শিরোপার সংখ্যায় গালাতাসারে ও ফেনারবাচে বেসিকতাসের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। তুরস্ক লিগে ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া বেসিকতাস অবশ্য নিজেদেরকে হোম অফ চ্যাম্পিয়নস (ড্রেসিংরুমের নাম) হিসেবেই আখ্যায়িত করে। শিরোপায় পিছিয়ে থাকলেও ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বেসিকতাস অবশ্য ইতিহাসে ওই দুই ক্লাবকে পেছনে ফেলেছে (গালাতেসারে ১৯০৫ ও ফেনারবাচে ১৯০৭)।
অন্য দুই ক্লাবের জাদুঘর এক তলাতেই সীমাবদ্ধ। সেখানে বেসিকাতাসের জাদুঘর দুই তলা জুড়ে। প্রথম তলায় রয়েছে ফুটবলে বিভিন্ন ট্রফি, ক্লাবের কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের গল্প। এর নিচের তলায় আছে আরো সুন্দর ইতিহাস। নিচতলায় মাঝের শেষ অংশে রয়েছে সুলেমান সেবা কর্ণার। যিনি এই ক্লাবের অন্যতম সেরা ফুটবলার এবং পরবর্তী ক্লাবের সভাপতিও হয়েছেন। তাকে অনারারী সভাপতিও রাখা হয়েছিল অনেক দিন।
তুরস্কের অন্যতম পুরনো ক্লাব হলেও আধুনিকতাকেই ধারণ করে বেসিকতাস। সুলেমান সেবা কর্ণারে রয়েছে তার জীবদ্দশায় দেয়া নানা সাক্ষাৎকার। শুধু সুলেমানের সাক্ষাৎকার নয়, বেসিকতাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলার ভিডিও ক্লিপও থরে থরে সাজানো জাদুঘরের নিচের অংশে। ফেনারবাচে ও গালাতাসারের জাদুঘরে তাদের ঐতিহাসিক কিছু ম্যাচের ফলাফল থাকলেও ভিজুয়াল নেই। \
১১৯ বছরের ক্লাব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জার্সির রং, আকার বদলেছে। জাদুঘরের একটি অংশে জার্সির জন্য আলাদা কর্ণারই রয়েছে। যেখানে ক্লাবের জার্সির বিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে। জার্সির পাশেই রয়েছে ফুটবলের বিবর্তন।
বেসিকতাসের আভিজাত্য ধরা পড়ল আরেকটি বিষয়ে। গালাতেসারে ও ফেনারবাচের জাদুঘর সমৃদ্ধ হলেও লাইব্রেরি চোখে পড়েনি। বেসিকতাসের জাদুঘরে এক অংশে রয়েছে লাইব্রেরি কর্ণার। তুরস্কের শীর্ষ তিন ক্লাবের জাদুঘর ও স্টেডিয়াম দেখতে নানা দেশ থেকে লোকজন আসে। আগত শিশুদের খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে বেসিকতাসের জাদুঘরে। এক কক্ষে অনলাইন গেমস আর এর পাশেই ছোট্ট জায়গায় বাচ্চাদের ফুটবল কসরতের জায়গা।
জাদুঘর থেকেই দেখা মেলে বেসিকতাসের সবুজ মাঠ। শনিবার দিন বেশ নিবিড় পরিচর্যা চলছিল মাঠের। পরের দিনই লিগের ম্যাচ ছিল। লিগের ম্যাচের আগে ক্লাবের খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করেন আলাদা ভিন্ন জায়গায়।
তুরস্কের শীর্ষ তিন ক্লাবেরই একাডেমি রয়েছে। একাডেমির ফুটবলাররা ক্লাবের তত্ত্বাবধানে আবাসিক ক্যাম্পে থাকেন। তবে শীর্ষ লিগের জন্য সেভাবে ক্লাব টেন্ট নেই বলে জানা গেল। অফ সিজন ক্যাম্পের সময় শহরের বাইরে আবাসিক ক্যাম্প হয়। লিগ চলাকালে খেলোয়াড়েরা নিজ বাসাতেই থাকেন। বিদেশি ফুটবলাররা অনেক সময় নিজে বাসা ভাড়া করেন অথবা ক্লাবগুলো বাসা ভাড়া করে দেয়।
তিন ক্লাবেরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকলেও ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে তারা অবশ্য কাছাকাছি। তিন ক্লাবেরই জাদুঘরের সাথেই লাগানো তাদের অফিসিয়াল শপ। যেখানে আছে ক্লাবের টি শার্ট, পতাকা সহ নানা সামগ্রী। ক্লাবের স্টেডিয়াম ছাড়াও ইস্তাম্বুলের অনেক বড় শপিংমলেও এই তিন ক্লাবের কিটস আউটলেট রয়েছে। শুধু শহরে নয়, বিমানবন্দরেও রয়েছে এদের শপ।
পৃষ্ঠপোষকদের সর্বোচ্চ কদর রয়েছে তিন ক্লাবেই। বেসিকতাসের স্টেডিয়াম ভোডাফোনের নামেই। স্টেডিয়ামের বিভিন্ন কোণা সহ লিফটেও রয়েছে ভোডাফোনের লোগো। গালাতাসারে ও ফেনারবাচেতেও একই চিত্র দেখা গেছে।
এজেড/এনইউ/এটি