তুরস্কে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা, চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে পেয়েছেন সফলতা
রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প-সাহিত্যে তুরস্কের দিকে ঝোঁক সারা বিশ্বের। বাংলাদেশিরাও নানা কাজে তুরস্কে যাতায়াত করেন। আগে মূলত শিক্ষা ও ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার হলেও তুরস্কে এখন বাংলাদেশি উদ্যোক্তাও রয়েছেন। তুরস্কে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস কাভার করতে গিয়ে তেমনই একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো।
পড়াশোনা করতে ইস্তাম্বুল এসেছিলেন মোঃ জনি। পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজও করতেন মানিকগঞ্জের এই যুবক। সেখান থেকে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা আসে তার মাথায়। ২০২০ সালের মাঝামাঝি জেওয়াই ট্রেডিং এন্ড টুরিজম প্রতিষ্ঠা করেন।
ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্র ফাতিহে দুই কক্ষ নিয়ে বেশ সুন্দর ও পরিপাটি একটি অফিস। এই অফিস থেকে টুরিজম, রিয়াল এস্টেট, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট, বিজনেস কনসালটেন্সির কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তুরস্ক সরকারের ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত জেওয়াই ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জনি তুরস্কে এই উদ্যোগ গ্রহণ সম্পর্কে বলেন, ‘শুরুর দিকে বেশ চ্যালেঞ্জ ছিল। পরিবারের সহায়তা ছিল। যার ফলে এখানে এই উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়েছে।’
দুই বছর পর এখন লাভের দিকে হাঁটছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশি ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকানরাও টুরিজমে জেওয়াই ট্রেডিংয়ের উপর নির্ভর করে। অফিস ছোট হলেও তারা ১৫০ জনের হসপিটালিটি দেয়ার সামর্থ্য রাখে, ‘আমাদের অধীনে বেশ কয়েকটি বাসা রয়েছে। যেগুলো ইউরোপিয়ানরা ব্যবহার করে। অনেক সময় অনেক গ্রুপ বা প্রতিনিধি দল আসে। তখন আমাদের সাথে চুক্তি করা হোটেলগুলোতে রাখি। সেই হোটেলে অতিথিরা কম খরচে থাকতে পারে। বিমানবন্দর থেকে নামার পর আবার বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সকল কিছুরই ব্যবস্থা রয়েছে।’ বলছিলেন জনি।
তুরস্কে কয়েক হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ইস্তাম্বুলেই বসবাস। তুরস্কে বাংলাদেশি বসবাসকারীদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এর বাইরে যারা রয়েছেন তাদের কাজ ও উদ্দেশ্য ভিন্ন। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা তিন-চার জনের বেশি নেই।
উদ্যোক্তা জনির মাধ্যমে বাংলাদেশিদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই মুহূর্তে চার জন বাংলাদেশি রয়েছেন। সামনে আরো কয়েকজন যুক্ত হবেন। তুরস্কে অনেক বাংলাদেশি স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসেন আবার অনেকে নিজের খরচেও পড়েন। জনির প্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে অনেক ছাত্রও সময় দেন।
তার্কিশ এয়ারলাইনসে প্রতিদিন দুটি ফ্লাইট ঢাকা-ইস্তাম্বুল। বাংলাদেশি অনেকে এই ফ্লাইট ব্যবহার করলেও তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজনই ইস্তাম্বুল নামেন, ‘ইউরোপে যারা যাতায়াত করেন এরা ট্রানজিট হিসেবে ইস্তাম্বুল ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে ফ্লাইট সংখ্যা অনেক থাকলেও ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশি প্রবেশের সংখ্যা সেই তুলনায় কম।’
রিয়াল এস্টেট, টুরিজমের পাশাপাশি নাগরিকত্ব নিয়েও কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। তুরস্কে কেউ আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে তুরস্কের নাগরিকত্ব পেত। সেটা এই বছর জুনে বাড়িয়ে চার লাখ ডলার করা হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় থাকায় কয়েকজন বাংলাদেশি বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে জানালেন জনি, ‘বাংলাদেশে থাকা বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নেয়নি তুরস্কের। তবে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপ, আমেরিকায় থাকেন। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম মুসলিম ও পাশ্চাত্য ঘরানায় বড় করতে অনেকে বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তবে সংখ্যা খুব বেশি নয়।’ রিয়েল এস্টেট, নাগরিকত্বের মতো জটিল বিষয়ের জন্য জেওয়াই ট্রেডিংয়ের তার্কিশ বিশেষ আইনজীবীও রয়েছেন।
এজেড