চা বিক্রেতা থেকে পদকের লড়াইয়ে স্মৃতি
অন্য দেশের ভারোত্তোলকরা তখনো ওজন তুলছিলেন। বাংলাদেশের ভারোত্তোলক স্মৃতি আক্তার ততক্ষণে ব্রোঞ্জ পদক থেকে ছিটকে গেছেন। মৃদু পায়ে ভারোত্তোলনের হল ত্যাগ করছিলেন।
খুব কাছে থেকে পদক না পাওয়ায় বেশ আফসোস হয়েছে স্মৃতির, ‘স্ন্যাচে আমার চেয়ে মাত্র ১ কেজি বেশি ছিল ইরানের ভারোত্তোলক। ১ কেজি পার্থক্য থাকায় খারপ লাগছে৷ পদকের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল।’ আরেক দিক থেকে তৃপ্ত এই ভারত্তোলক, ‘দেশে ৫৫ ওজন শ্রেণিতে যে ওজন তুলি এর চেয়ে ২ কেজি করে বেশি তুলেছি৷ আন্তর্জাতিক আসরে জাতীয় রেকর্ড করায় ভালো লাগছে।’
আরও পড়ুন >> ভারোত্তোলনে স্মৃতির রেকর্ড, হ্যান্ডবলে আফগান বধ
কোনিয়া দাড়িয়ে স্মৃতি খানিকক্ষণের জন্য ফিরে গেলেন বেশ কয়েক বছর আগে, ‘মজিবুর চাচা আমাকে ভারোত্তোলনে না আনলে আমি এখানে আসতে পারতাম না।’ সাবেক ভারত্তোলক ও কোচ মজিবুর রহমান তাকে ভারত্তোলনে কিভাবে আনলেন সেই গল্প কোনিয়ায় দাঁড়িয়ে স্মতি স্মৃতিচারণ করলেন এভাবে, ‘স্টেডিয়ামে আমার বাবা-মা চা বিক্রি করতেন। আমিও তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে চা বিক্রি করেছি। মজিবুর চাচা আমাদের দোকানে চা খেতেন। সেখান থেকে পরিচয়। আমার মাকে একদিন বললেন মেয়েক ভারোত্তোলনে দাও, তোমাদের কষ্ট কমবে। এরপর থেকে আমার ভারোত্তোলনে যাত্রা শুরু।’
মজিবুর ভারত্তোলনে আনলেও স্মৃতির পেছনে অনেক অবদান কোচ শাহরিয়া সুলতানা সুচির, ‘তিনি শুরু থেকে আমাকে কোচিং করিয়েছেন৷ আমার পারফরম্যান্সের পেছনে তার অবদান অনেক। বিদ্যুৎ ভাইও আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছে।’
ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে দেশের অন্য সব খেলায় তেমন অর্থ নেই। ভারত্তোলন, অ্যাথলেটিক্স সহ অন্য খেলার খেলোয়াড়েরা বেশ কষ্টেই জীবনযাপন করেন৷ ভারত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরী পাওয়ায় এখন কিছুটা স্বচ্ছলতা হয়েছে তাঁর, ‘সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর নিয়মিত বেতন পাই যা দিয়ে নিজে চলতে পারি ও পরিবারকে সাহায্য করতে পারি।’
আরও পড়ুন >> রুমির শহরে রুমির জাদুঘরে কিছুক্ষণ
২০১৩-১৪ সালে ভারত্তোলনে যাত্রা শুরু করা স্মৃতি ইতোমধ্যে এসএ গেমস, বিশ্ব ভারত্তোলন চ্যাম্পিয়নশীপের পর এবার ইসলামিক সলিডারিটি গেমস খেললেন৷ এই পর্যায়ে আসতে পের বেশ তৃপ্ত তিনি, ‘আজ এখানে আসতে পেরেছি ভাবলেই নিজেকে গর্বিত লাগে। ভারোত্তোলনে না আসলে আমার জীবনটা এত সুন্দর হতো না। ফেডারেশন আমাকে নির্বাচিত করায় ধন্যবাদ।’
বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গেমসগুলোতে আরো ভারত্তোলকদের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। এমনিতেই এই খেলায় সম্মানী তেমন নেই, এরপরও যদি দেশের বাইরে খেলার সুযোগ না পায় তাহলে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’ গেমসগুলোতে ভারত্তোলনে পদকের সম্ভাবনা থাকে ভালো। অনেক ওজন শ্রেণীতে প্রতিযোগি কম থাকায় পদকেট সম্ভাবনা থাকে অনেক।
এজেড/এইচএমএ