‘নতুন’ নেতৃত্বে ‘নতুন’ শুরু বাংলাদেশের
ভারত সফরের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো গোলাপি বলের টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল, অথচ অধিনায়ক হয়েও অনুশীলনে অনুপস্থিত সাকিব আল হাসান। সেই সফরের কয়েকদিন আগে ধরেই কানাঘুষা চলছে, বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে ছাড়াই ভারতে যাবে টাইগাররা। পরে সবকিছু খোলসা হলো। জুয়াড়ির দেওয়া তথ্য গোপনের অপরাধে নিষিদ্ধ হলেন সাকিব।
বিকল্প অধিনায়কের খোঁজে নামল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। অনেকটা জোর করে নেতৃত্ব পড়ল মুমিনুল হকের কাঁধে। তবে সেই দায়িত্ব ভার বেশিদিন বইতে পারলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দলের পারফরম্যান্স আর ফলাফল যেমন পক্ষে আসছিল না, তেমনি ব্যাটসম্যান মুমিনুলও নিজেকে হারিয়ে খোঁজায় ছিলেন ব্যস্ত। ঘরের মাঠে সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ তার জন্য ছিল ‘এসিড’ টেস্ট। সেই টেস্ট উতরে যেতে পারেননি মুমিনুল।
অনেকটা বাধ্য হয়েই অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন মুমিনুল। আবার শুরু হয় নতুন অধিনায়কের খোঁজ। ঘুরেফিরে আবার নেতৃত্ব ফিরে পান সাকিব। ‘নতুন’ করে ফিরলেন তিনি। আসন্ন উইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে অধিনায়কত্বের প্রত্যাবর্তন তার। এনিয়ে তিন দফা বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন এই অলরাউন্ডার। সাকিবের নেতৃত্বেই আবার পাঁচদিনের ফরম্যাটে ‘নতুন’ শুরুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ দল।
সাকিবের এই ‘নতুন’ যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে উইন্ডিজের মুখোমুখি বাংলাদেশ দল। অ্যান্টিগায় সিরিজের প্রথম ম্যাচে রাত ৮টায় মাঠে নামবে সফরকারীরা। ‘নতুন’ করে দায়িত্ব পেয়ে প্রথমবার প্রেস কনফারেন্সে মুখোমুখি হয়ে ‘নতুন’ শুরুর বার্তা দিয়েল সাকিব নিজে।
সাকিব বলেছেন, ‘টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো খেলিনি। এখন সুযোগ সবাইকে ভুল প্রমাণ করার। আমরা আসলেই ভালো করতে পারি। এ ম্যাচে ভালো করতে পারলে সিরিজের জন্য ভালো শুরু হবে।’
উইন্ডিজ বেশ পছন্দের জায়গা সাকিবের ২০০৯ সালের সফরে মাশরাফি বিন মুর্তজা ইনজুরিতে পড়ার পর তার অধিনায়ত্বেই প্রথম দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস লেখে বাংলাদেশ দল। অর্জনের সঙ্গে অবশ্য তিক্ততাও আছে।
সবশেষ ২০১৮ যালে যখন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সফর করেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই সফরে টেস্টে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবারের সিরিজের প্রথম টেস্টের ভেন্যু অ্যান্টিগায় সেবার ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিল সাকিবের দল। যা নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন সংগ্রহ হয়ে আছে। তবে মাঝে কেটে গেছে আরো ৪ বছর। সেই স্কোয়াডের অনেকেই এবার নেই, তাদের জায়গা পূরণ করেছেন তরুণরা।
সাকিবের আস্থা এই তারুণ্যেই, ‘জয় দক্ষিণ আফ্রিকায়, নিউজিল্যান্ডে ভালো করেছে। এটি আরেকটি চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। সে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য সত্যিই ভালো করতে পারে। রাজা নতুন পেসার। তার দিকে তাকাতে পারি। আরও কয়েকজন ছেলে আছে। মিরাজ দলে ফিরেছে, এটা আমাদের জন্য বড় বুস্ট। সোহান আরেকজন, যে আসা যাওয়ার মধ্যে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে আছে, আশা করি সে এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এনে বাংলাদেশকে আনন্দ এনে দিতে পারে।’
সাদা পোশাকে দুই দলের লড়াইয়ে অবশ্য এগিয়ে ক্যারিবীয়রা। ১৮ বারের দেখায় ১২ জয় উইন্ডিজের। বাংলাদেশ জিতেছে ৪টি আর ড্র হয়েছে ২ ম্যাচ। সবশেষ ৫ সাক্ষাতের হিসেব কষলেও ৩-২ এ এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হিসেবটা শুধু ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে হলে সেখানেও পিছিয়ে বাংলাদেশ দল। ৮ বারের মুখোমুখি দেখায় ৫ হার আর ২ জয় সফরকারী শিবিরের।
সেখানে এবার বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ নিয়ে যতটা না ভাবনা, তার থেকে ঢের ভাবনা আবহাওয়া আর কন্ডিশন নিয়ে। উইন্ডিজ স্বাগতিক হলেও অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে বাংলাদেশ দল। তবে ফলাফল পক্ষে আনতে গেলে উইকেটের চরিত্র পড়তে হবে আগে।
অ্যান্টিগায় ৪ বছর আগের সেই উইকেটের সঙ্গে আবারের উইকেটের বিস্তর পার্থক্য দেখছেন সাকিব, ‘আমার মনে হয়, পুরোপুরি আলাদা উইকেট, চার বছরের আগে থেকে। আমার কাছে মনে হচ্ছে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। অবশ্য চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং কঠিন হবে, স্পিনাররা কাজে আসবে তখন। আমাদের সব কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। ছেলেরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।’
‘নতুন’ অধিনায়ক সাকিবের হাত ধরে ‘নতুন’ বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে শেষপর্যন্ত কতদূর যায় এখন সেটির দেখার অপেক্ষা। সঙ্গে ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দিতে অধিনায়কত্ব ছাড়া মুমিমুল হক নিজেকে ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে কতটা সফল সেদিকেও চোখ থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। পাশাপাশি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ এই সিরিজে পয়েন্টের দিকেও চোখ থাকবে সাকিবদের।
মুশফিকুর রহিম ছুটি নেওয়ায় এই সিরিজে নেই। তার পরিবর্তে যাকে ভাবা হচ্ছিল, সেই ইয়াসির আলি রাব্বিও চোটের কারণে ছিটকে গেছেন। এতে কপাল খুলতে পারে নুরুল হাসান সোহানের। এই ম্যাচ দিয়ে প্রায় দেড় পছর পর আবার সাদা পোশাকে প্রত্যাবর্তন হতে পারে মুস্তাফিজের রহমানের। পেস বোলিং বিভাগে এবাদত হোসেন আর খালেদ আহমেদ সুযোগ পেলে অভিষেকের অপেক্ষা বাড়তে পারে রেজাউর রহমান রাজার।
প্রথম টেস্টের জন্য যেমন হতে পারে বাংলাদেশ দলের একাদশ-
তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, এবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
টিআইএস