রাজধানীতে বিশ্বকাপ ট্রফি : উৎসবের মাঝেও বিষাদের সুর!
সকাল দশটা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলেছে বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলা। হোটেল র্যাডিসনে আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বৃহস্পতিবার ফুটবল ব্যক্তিত্বদের সেভাবে চোখে পড়েনি। হোটেল র্যাডিসনে প্রায় তিন ঘন্টা অবস্থান করে মাত্র দুই সাবেক জাতীয় ফুটবলার সাইফুর রহমান মনি ও আরমান আজিজকে চোখে পড়েছে।
২০০১ সালে বিশ্বকাপের ট্রফি যখন এসেছিল তখন সেটি উঁচিয়ে ধরেছিলেন তৎকালীন জাতীয় দলের অধিনায়ক আলফাজ আহমেদ। এবার ট্রফি নিয়ে বাফুফের সে রকম পরিকল্পনা না থাকায় সাবেক এই অধিনায়ক কিছুটা অবাক, ‘বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে আসা বিরাট সম্মানের। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই সময় অধিনায়ক থাকায় ট্রফিটি ধরার। এবার জাতীয় দল বাইরে থাকলেও নারী দল বা অন্য কোনো মাধ্যমে কিছু করার সুযোগ ছিল।’ জাতীয় ফুটবলাররা মালয়েশিয়ায় থাকলেও তাদের পরিবারের অনেকেই এসে ছবি তুলেছেন।
বাংলাদেশ ফিফার সদস্য পদ ১৯৭৬ সালে পেলেও বিশ্বকাপ বাছাই খেলতে সময় লেগেছে আরো নয় বছর। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অধিনায়কত্ব করে বিশেষ ইতিহাসে কুশলী মিডফিল্ডার আশীষ ভদ্র। একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বকাপের ট্রফি তিন বার বাংলাদেশে এলেও একবারও আশীষ ভদ্র এই উপলক্ষ্যে বিশেষ আমন্ত্রণ পাননি। যদিও মাঝে মধ্যে ফেডারেশন থেকে বিশেষ নিমন্ত্রণ পান বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে খেলার জন্য। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে অংশগ্রহণও করেছেন দুয়েকবার।
১৯৮৫ সালেই সাফ গেমসে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন ইমতিয়াজ সুলতান জনি। বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশ দলের আর্মব্যান্ড ছিল এই ফুলব্যাকের কাছে। বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে আগমনের উপলক্ষ্যে সাবেক অধিনায়কদের ও প্রথম বিশ্বকাপ বাছাই খেলা দলের একটু বিশেষ সম্মান প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি, ‘বিশ্বকাপ ট্রফি অত্যন্ত মর্যাদার বিষয়। বিশেষ করে যারা প্রথম বিশ্বকাপ বাছাই খেলেছে এদের অনেককে না হলেও অন্তত অধিনায়ককে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো যেত। বিভিন্ন সময়ে যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তাদেরও সম্মান জানালে এটি আরো মর্যাদাপূর্ণ হতো।’
দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেই জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক (১৯৭৫ সালের মারদেকা কাপ)। তার সঙ্গে বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন আরো তিন সাবেক জাতীয় অধিনায়ক সত্যজিৎ দাশ রুপু, আরিফ হোসেন মুন ও ইলিয়াস হোসেন।
১৯৮৯ সাফ গেমসে অধিনায়কত্ব করা ইলিয়াস আবার সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবেরও সাধারণ সম্পাদক। বিশ্বকাপ ট্রফির প্রদর্শনীতে সাবেক অধিনায়কদের বিশেষ সম্মান না পাওয়া সম্পর্কে তার মতামত, ‘এবারের প্রেক্ষাপটটি একটু ভিন্ন। এই ট্রফির মূল ব্যবস্থাপনায় কোকাকোলা। তারা ফেডারেশনকে নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা দিয়েছে আমন্ত্রণের। ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় যারা রয়েছে সেই মোতাবেক তারা পরিকল্পনা করে দাওয়াত দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক কোনো সভা হলে আমি অবশ্যই সাবেক অধিনায়কদের অথবা বিশেষত প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের আমন্ত্রণের বিষয়টি উত্থাপন করতাম।’ ইলিয়াস নিজেও ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলেছেন।
কোকাকোলা ফিফার বিশ্বকাপ ট্রফির কমার্শিয়াল পার্টনার। কোকাকোলা বাংলাদেশের ফুটবলেও এক সময় পৃষ্ঠপোষকতা করত। আজকের ট্রফি প্রর্দশনীতে কোকাকোলা সেই দিনের ছবিগুলোও প্রদর্শনী করেছে বড় বোর্ডে। সেই ব্যক্তিদের মধ্যে কাউকে বাফুফে বিশেষ আমন্ত্রণ জানালে কোকাকোলার বাদ সাধার কথা ছিল না। উল্টো অনুষ্ঠানটি ভিন্ন মর্যাদা ও আকর্ষণ পেত। ফুটবল সংশ্লিষ্টদের ধারণা বাফুফে এভাবে ভাবেনি। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বাফুফের পরিকল্পনা ও সমন্বয় দক্ষতার সংকট ফুটে উঠেছে।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি যেখানে আনন্দের উপলক্ষ্যে ভরপুর হওয়ার কথা সেখানে বিষাদের সুর বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে! ২১ জনের নির্বাহী কমিটির মধ্যে গতকাল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রফি নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন বাফুফের সাত জন কর্মকর্তা। নির্বাচিত সাত প্রতিনিধির সঙ্গে ছিলেন পেশাদার সাধারণ সম্পাদক। এতেই আপত্তি তোলেন নির্বাহী সদস্যদের একাংশ। এর প্রতিবাদ স্বরুপ বিশ্বকাপ ট্রফির কর্মকান্ড বর্জনও করেছেন কয়েকজন সদস্য। একজন নির্বাহী সদস্য তাদের দাওয়াত কার্ড উল্টো ফিরিয়েও দিয়েছেন।
বিশ্বকাপ ফুটবল ট্রফি তরুণ ফুটবলারদের জন্য উদ্দীপনা ও উৎসাহ। জাতীয় ফুটবল দল দেশের বাইরে থাকলেও ঘরোয়া লিগে খেলা অনেক ফুটবলার রয়েছেন ঢাকাতেই। সেই সকল ফুটবলারদের তেমন কাউকেই আজ সকালে দেখা যায়নি। দেশের ফুটবলের ঝান্ডা এখন নারীদের হাতে। সেই সাবিনা-মারিয়াদের উৎসাহের বড় উদ্দীপনা হতে পারত বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি। কিছুদিন আগে এলিট একাডেমিতে নাম লেখানো ফুটবলাররাও এই ট্রফি দেখে বড় স্বপ্ন বুনতে পারতেন। এদের কাউকেই আজ দেখা যায়নি। একাডেমির ও নারী ফুটবলারদের সন্ধ্যার কনসার্টে উপস্থিত থাকার কথা। সেখানে ট্রফি দেখা গেলেও ছবি তোলার সুযোগ তারা কতটুকু পান সেই সংশয় রয়েই গেছে।
১৯৮৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ দল
মহসীন, কানন (গোলরক্ষক), অলোক, বাতেন, দিলীপ, স্বপন, জনি,কায়সার হামিদ, আজমত, আশীষ ভদ্র (অধিনায়ক), জাহিদ,বাবুল, ইলিয়াস, ওয়াসীম, আসলাম, চুন্নু, জোসী, মঈন ও বাদল রায়।
দলনেতা- চৌধুরী মমতাজ হোসেন রাজামিয়া ( সদস্য, বাফুফে, ফরিদপুর জেলা)
ম্যানেজার-মনিরুল হক চৌধুরি ( সদস্য, বাফুফে )
কোচ-আব্দুর রহীম
এজেড/এটি/এইচএমএ