কষ্টার্জিত জয়ে রিয়ালের শিরোপার উৎসব পিছিয়ে দিলো বার্সা
ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত যেন রীতিমতো মধুচন্দ্রিমাই কাটছিল জাভি হার্নান্দেজের বার্সেলোনার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সা যেন প্রতিপক্ষের জালে চার গোল জড়ানোর পণ নিয়েই নামতো সে সময়টায়।
এরপরই এলো আন্তর্জাতিক ফুটবলের উইন্ডো, তা থেকে ফিরে ঘটল বার্সার ছন্দপতন। নিজ মাঠে হারল টানা দুই ম্যাচে, যার প্রথমটা ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছে দলটার, আর দ্বিতীয়টা ‘শেষ’ করেছে লিগের আশা। নিজেদের মাঠে জেতা ভুলে যাওয়া বার্সা অবশেষে জয়ের দেখা পেয়েছে। রিয়াল সোসিয়েদাদের মাঠ থেকে ফিরেছে ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয় নিয়ে।
আগের ম্যাচে কাদিজের বিপক্ষে হারটা বার্সেলোনার শিরোপা-স্বপ্ন তো শেষ করেছেই, শীর্ষ চারে থেকে মৌসুম শেষ করার সম্ভাবনাকেও দিয়েছে খানিকটা চোখরাঙানি। শীর্ষ চারের লড়াইয়ে থাকা বাকি দলগুলোর সঙ্গে যে পয়েন্টের ব্যবধানটা খুব বেশি নয়!
আগের রাতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের গোলশূন্য ড্রয়ে বার্সার সুবিধাই হয়ে গিয়েছিল খানিকটা। তবে বৃহস্পতিবার রাতের শুরুর ম্যাচে সেভিয়ার জয়ে বার্সা চলে গিয়েছিল পয়েন্ট তালিকার চারে। দুইয়ে ফিরে আসতে হলে জয় ছাড়া উপায় খোলা ছিল না জাভির দলের সামনে। হেরে বা ড্র করে বসলে প্রতিপক্ষ সোসিয়েদাদও চলে আসতো ২ কিংবা ৫ পয়েন্টের দূরত্বে। যা নিশ্চিতভাবেই খানিকটা চাপে ফেলে দিত দলকে।
এমন সমীকরণকে সামনে রেখে ব্লাউগ্রানারা গিয়েছিল সোসিয়েদাদের মাঠ অ্যানোয়েতায়। সেই ম্যাচ থেকে ১-০ গোলের জয়ও বের করে এনেছে দলটি। তবে তা যে মোটেও সহজভাবে আসেনি, তা অন্তত স্কোরলাইন দেখেই আঁচ করা যায়।
ফেব্রুয়ারি-মার্চের সেই দুর্ধর্ষ বার্সেলোনা হারিয়ে খুঁজছে নিজেদের। খুঁজল এই ম্যাচেও। পুরো ম্যাচে গোলমুখে শট মোটে একটা। জাভি যে ‘ভালো ফুটবলের’ কথা বলেছিলেন সপ্তাহ দেড়েক আগে, সেই ভালো ফুটবলও দল খেলতে পারল কই? ৪৪ শতাংশ সময় বল দখলে রাখতে পেরেছে দলটি।
শুরুটা অবশ্য ভালোই হয়েছিল, বলের দখলে ছিল সফরকারীদেরই আধিপত্য। তারই হাত ধরে ১১তম মিনিটে এলো একমাত্র গোলটা। ডান প্রান্ত থেকে উসমান দেম্বেলের শট প্রতিহত হয়েছিল বারপোস্টে, বক্সের কোণায় বলটা পেয়ে উঁচিয়ে তা ডান প্রান্তে থাকা ফেররান তরেসকে বাড়ান গাভি, সেখান থেকে তরেসের বুদ্ধিদীপ্ত লব করা পাসে মাথাটা আলতো ছুঁইয়ে বল সোসিয়েদাদের জালে জড়ান পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াং।
প্রথম ৪৫ মিনিটে এছাড়াও বেশ কিছু সুযোগ এসেছিল দলটির সামনে। তবে তরেস, দেম্বেলেরা সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ফলে বার্সা বিরতিতে যায় ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই।
বিরতির পর সোসিয়েদাদ ম্যাচে ফিরে এসেছিল বলের দখল নিয়ে। দারুণ কিছু সুযোগও এসেছিল দলটির সামনে। ৪৮ মিনিটে আলেক্সান্ডার সোরলথ অবিশ্বাস্য এক মিস করে বসেন। ফলে সমতায় ফেরা হয়নি সোসিয়েদাদের, মিনিট দশেক পর তার দারুণ এক শট ঠেকান মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন।
সেই যে বার্সা গোলরক্ষকের ব্যস্ততার শুরু, তা শেষ হয়নি শেষ বাঁশির আগ পর্যন্ত। পুরো ম্যাচে ৫ শট ঠেকাতে হয়েছে তাকে। যা তাকে এনে দিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কারও। সোসিয়েদাদ স্ট্রাইকার সোরলথ আর আলেক্সান্দার ইসাকও সুযোগ কম নষ্ট করেননি। যার ফলে লাভটা হয় বার্সার। ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জাভির দল।
এই জয়ের ফলে ৩২ ম্যাচ থেকে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে দলটি। ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা রিয়ালের শিরোপা জেতার অপেক্ষাটাও বাড়িয়ে দিয়েছে বার্সা। শিরোপার জন্য এখন তাই দুটো জয় তুলে নিতেই হবে রিয়ালকে।
এনইউ