কেউ ফুল দিলে কী করবেন?
ফুল ভালোবাসা, পবিত্রতা ও সুন্দরের প্রতীক। কেউ সুন্দর বলেছেন, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা তার নিয়ামত ও অনুকম্পাসমূহের তুলনা দিয়েছেন ফুলের সঙ্গে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি এদের বিভিন্ন ধরনের লোককে পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের ফুলস্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তুমি সেসব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না। তোমার পালনকর্তার দেওয়া রিজিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১৩১)
পার্থিব জীবনকে ফুলের সঙ্গে তুলনা
উপরিউক্ত আয়াতে ‘জীবনের ফুল’ (জাহরাতুল-হায়াত) বাক্যাংশে ‘ফুল’ শব্দটি সৌন্দর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে পরোক্ষভাবে ‘জীবনের ফুল’ বলে আল্লাহপ্রদত্ত রিজিকগুলোকে বোঝানো হয়েছে। বাস্তবেই মানুষের রিজিকের সঙ্গে ফুলের যোগসূত্র রয়েছে।
সাহাবায়ে কিরামের বাগানেও ফুলগাছ শোভা পেত। আবু খালদাহ (রহ.) বলেন, আবুল আলিয়াহ (রহ.)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আনাস (রা.) কি নবী (সা.) থেকে হাদিস শুনেছেন? আবুল আলিয়াহ (অবাক হয়ে) বলেন, তিনি তো একাধারে ১০ বছর তার সেবা করেছেন এবং তার জন্য নবী (সা.) দোয়া করেছেন। তার একটি বাগান ছিল, যাতে বছরে দুবার ফল ধরত। ওই বাগানে একটি ফুলগাছ ছিল, যা থেকে কস্তুরির ঘ্রাণ আসত। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৩৩)
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন ফুল
ফুল কখনো কখনো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। ফুলের সৌন্দর্য ও ঘ্রাণে মানুষ প্রায় সময় দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়। ফলে অনেক সময় মানুষ সুন্দর ও নিষ্পাপ কাউকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করে। প্রিয়নবী (সা.) তার প্রিয় দুই নাতিকে ফুলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
ইবনে আবু নুম (রহ.) বলেন, আমি ইবনে ওমর (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাকে মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তিনি বলেন, তুমি কোথাকার লোক? সে বলল, ইরাকের। তিনি বলেন, দেখো তাকে! সে আমাকে মশার রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। অথচ তারা নবী (সা.)-এর নাতিকে হত্যা করেছে। আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তারা দুজন পৃথিবীতে আমার দুটি ফুল। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৪)
ফুল দিলে কেউ কী করবেন?
কেউ ফুল দিলে একটি হাদিসে রাসুল (সা.) তা প্রত্যাখ্যান করতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, কাউকে কোনো ফুল দেওয়া হলে— সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কেননা, তা বহনে হালকা ও ঘ্রাণে উত্তম।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৮৭)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কেউ ফুল দিলে তা প্রত্যাখ্যান করতে নেই। কিন্তু ফুল নিতে-দিতে গিয়ে কোনো অসুবিধা বা বিপদে পড়ার কিংবা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে— অবশ্যই বিকল্প চিন্তা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে চলার তাওফিক দান করুন।