শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
শ্বশুরবাড়ির সম্পর্ক— আবহমানকাল থেকে চলমান নিয়ম। মানবসভ্যতার শুরু থেকেই এই ব্যবস্থা। কালের ঘুর্ণাবর্তে এতে ব্যাত্যয় ঘটেনি। ব্যাপারটা নিয়ে নতুন ও আলাদা করে পরিচয় দিতে হয় না। তবে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা কী স্ত্রীর দায়িত্ব? এ নিয়ে আমাদের আলোচনা।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, পুত্রবধু ও শ্বশুর-শাশুড়ির সম্পর্কের দায়িত্বগুলো কখনো একপক্ষীয় নয়। সন্তানের যেমন মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। মা-বাবারও তেমন সন্তানের জন্য অনেক কিছু করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয়, উভয়পক্ষ যখন নিজের অধিকার আর পাওনাগুলো নিয়েই ভাবতে শুরু করে এবং কর্তব্যগুলো ভুলে যায়— তখনই সংসারে কলহ ও দ্বন্ধ্বের আগুন জ্বলে ওঠে।
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা ও ননদ-দেবরদের কোনো কাজে সহযোগিতা করা— স্ত্রীর দায়িত্ব নয়। বরং এটা তার একটি অতিরিক্ত কাজ। কিন্তু বর্তমান সমাজে বিষয়টাকে এমনভাবে দেখা হয় যে, যেন এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব! বিভিন্ন পরিবারের অবস্থা তো এমন যে, ছেলের জন্য বউ আনা হয় কেবল শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। ইসলামের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। মা-বাবার সেবা-শুশ্রূষা করা সন্তানের দায়িত্ব— কোনোভাবেই পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩; কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)
প্রসঙ্গত, স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন দেখা দিলে, স্বামী নিজ কর্তব্যে তাদের সেবা-যত্ন করবেন। স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির বা স্বামীর মা-বাবার সেবা করে, সেটা প্রশংসনীয়। বিনিময়ে তিনি বিপুল সওয়াব পাবেন। তবে একটা কথা স্মরণ রাখতে হবে, এসব করতে স্ত্রী আইনত বাধ্য নয়।
মধ্যপন্থা, পরিমিতিবোধ ও নৈতিকতার দাবি
মোটকথা, মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের দাবি হলো, আইনত অধিকার নিয়েই স্বামী স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। অতিরিক্ত কিছু তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। তবে স্ত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে করলে ভিন্ন কথা।
আর স্ত্রীর কর্তব্য হলো- নৈতিকতাবোধ ও দায়বদ্ধতা রক্ষা করা। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের কাছেই পরিষ্কার থাকতে হবে, কার দায়িত্ব কতটুকু এবং নৈতিকতার চাহিদা কী? নৈতিকতার ভিত্তিতে স্ত্রী যা করবে— তা মর্যাদার চোখে দেখতে হবে। তার আন্তরিকতা ও সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিতে হবে।
ইসলাম ও নৈতিকতাবোধের দাবি এটা যে, স্ত্রী স্বামীর বাবা-মাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান দেবেন। তাদের প্রতি সমীহের চোখে দেখবেন। মনেপ্রাণে তাদের ভালোবাসবেন। তাদের সেবা-যত্নকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িরও কর্তব্য হলো- পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও মমতায় আবদ্ধ করা। তার সুখ, আনন্দ ও সুবিধার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দেওয়া।