কাউকে অভিশাপ দিলে নিজের যে ক্ষতি হয়
অভিশাপ বেশ পরিচিত শব্দ। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে কিছু মানুষ অভিশাপ দিয়ে বসে। অপছন্দের লোকের প্রতি আল্লাহর গজব নেমে আসার অপেক্ষা করে। তার ক্ষতি ও ধ্বংস কামনা করে। এটা বড় গর্হিত কাজ, কিন্তু কিছু মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়ে যায় এমন অভ্যাস।
কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে অভিশাপ দেওয়া বা কারও অকল্যাণ কামনা করা সম্পূর্ণ হারাম ও অনুচিত। অনেক সময় অভিশাপ হিতেবিপরীত হয়। যে অভিশাপ দেয়, সে নিজে স্বয়ং অভিশাপের অনলে পুড়ে। এটা হাদিস শরিফে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
অভিশাপ মুমিনের জন্য অশোভনীয়
তেমনিভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়াও কোনো মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৮৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর আল্লাহর লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৬)
অভিশাপদাতা পরকালে অপমানিত হবে
অভিসম্পাতকারী আখেরাতেও মান-মর্যাদা পাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৮)
এসব হাদিস দ্বারা এ কথা সহজেই অনুমেয় হয় যে— অন্যায়ভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রিয়নবী (সা.) অভিশাপ ও অভিশাপকারীকে পছন্দ করেননি।
অভিশাপে বরং নিজে আক্রান্ত হতে পারে
রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়, অতপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৭)
প্রকৃতিকেও লানত করতে নেই
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর বাতাসকে লানত (অভিশাপ) দিল, তখন নবীজি বললেন, বাতাসকে লানত দিও না, কেননা এ তো আল্লাহরপক্ষ থেকে নির্দেশিত। কেউ যদি কোনো বস্তুকে লানত বা অভিশাপ দেয়, আর সে যদি ওই লানতের পাত্র না হয়, তাহলে সেই লানত লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৮; আবু দাউদ, হাদিস : ২/২৭৬)
বোঝা যায়, যে লানত বা অভিশাপ দেবে সে যদি অভিশাপের উপযুক্ত না হয়, তাহলে এই অভিশাপ তার দিকে যায় না। বরং অভিশাপকারীর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়। এ জন্য অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া চাই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন।