কবরের প্রথম রাত যেমন হবে
প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যু বরণ করতে হবে। মৃত্যু থেকে পালিয়ে থাকার সুযোগ কারও নেই। মৃত্যুর পর মুমিনের প্রথম গন্তব্য কবর। যে ব্যক্তি ভালো আমল করবে এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রস্তুতি নেবে, কবর তার জন্য সুখ ও আনন্দের ঘর। আর যে ব্যক্তি খারাপ আমল করবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে ত্রুটি করবে, কবর তার জন্য ভীতি ও অন্ধকারের ঘর।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কবর পরকালের প্রথম ঘাঁটি। কেউ যদি এখান থেকে মুক্তি পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য সহজ হবে। আর যদি কেউ কবর থেকে মুক্তি না পায়, তাহলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য আরো কঠিন হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৮)
কবরজীবনের প্রথম প্রহর কেমন হবে— এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন সাহাবি বারা ইবনে আজেব (রা.)। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আনসার গোত্রের এক ব্যক্তির জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য রওনা হয়ে কবরের কাছে গেলাম। কিন্তু তখনো কবর খনন শেষ হয়নি। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বসে পড়েন। আমরাও তার চারদিকে নীরবে তাকে ঘিরে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে। তখন তার হাতে ছিল একখানা লাঠি, তা দিয়ে তিনি মাটিতে আঁচড় কাটছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে দুই বা তিনবার বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাও।
জারির (রহ.)-এর বর্ণনায় আরো উল্লেখ আছে যে রাসুল (সা.) বলেন, মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় যখন তারা ফিরে যেতে থাকে, আর তখন তাকে বলা হয়, হে অমুক, তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী এবং তোমার নবী কে?
বর্ণনাকারী হান্নাদ (রহ.) এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, অতঃপর তার কাছে দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে উভয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ। তারা উভয়ে তাকে প্রশ্ন করে, তোমার দ্বিন কী? সে বলে, আমার দ্বিন হলো ইসলাম। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? তিনি বলেন, সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)। তারপর তারা উভয়ে আবার বলে, তুমি কী করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।
জারির (রহ.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এটাই হলো আল্লাহর এ বাণীর অর্থ— ‘যারা এ শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ২৭)
এরপর বর্ণনাকারী জারির ও হান্নাদ উভয়ে একইভাবে বর্ণনা করেন—
অতঃপর নবী (সা.) কাফিরদের মৃত্যু প্রসঙ্গে বলেন, তার রুহকে তার শরীরে ফিরিয়ে আনা হয় এবং দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তারা প্রশ্ন করেন, তোমার দ্বিন কী? সে বলে, হায়! আমি কিছুই জানি না। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? সে বলে, হায়! আমি তো জানি না। তখন আকাশের দিক থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা বলেছে। সুতরাং তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা এনে বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও, আর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন, অতঃপর তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত বাতাস আসতে থাকে। এ ছাড়া তার জন্য তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হয়, ফলে তার এক দিকের পাঁজর অপর দিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়। বর্ণনাকারী জারির বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার সঙ্গে একটি লোহার হাতুড়ি থাকবে, যদি এ দ্বারা পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধুলায় পরিণত হয়ে যাবে। নবী (সা.) বলেন, তারপর সে তাকে হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকে, এতে সে বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে, যা মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সব সৃষ্টি জীবই শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। তিনি বলেন, অতঃপর (শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য) পুনরায় তাতে রুহ ফেরত দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৫৩)