টুথব্রাশ ব্যবহারে মিসওয়াকের সওয়াব পাওয়া যাবে কি?
মিসওয়াক করা নবীজি (সা.)-এর সুন্নত। মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম। আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়। গাছের ডাল বা শিকড় দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিষ্কার করাকে মিসওয়াক করা বলা হয়। এছাড়া দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলা হয়।
এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমানে টুথব্রাশ দ্বারা এই সুন্নাত আদায় হবে? অনেকে বলে থাকেন- টুথব্রাশ দ্বারা এই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
প্রথম কথা হলো- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে না করতাম, তবে তাদেরকে প্রত্যেক অজুর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ প্রদান করতাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রত্যেক নামাজের সময় (অজুর সাথে) মিসওয়াকের নির্দেশ প্রদান করতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৮৭; মুসলিম, হাদিস : ২৫২; ইবনু হিব্বান, হাদিস : ১৫৩১)
একটি হাদিসে এসেছে, ‘দ্বীন ইসলামের স্বভাবজাত দাবি দশটি, যার অন্যতম একটি হলো- মিসওয়াক করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১)
গত শতকের আরবের সুপ্রসিদ্ধ কয়েকজন আলিম বলেছেন, টুথব্রাশ দ্বারাও মিসওয়াকের সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। তাদের মতে, মূল ইবাদত হলো মুখ পরিষ্কার করা ও দুর্গন্ধ দূর করা। যেহেতু টুথব্রাশ দিয়ে প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে, সেহেতু এটি মিসওয়াকের বিকল্প হতেই পারে। যেমন- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মিসওয়াক করো। কেননা, তা মুখের পবিত্রতার উপায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২৮৯; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১০৭০)
আরও পড়ুন : রাস্তায় কোন পাশে চলা সুন্নত?
তবে অসংখ্য আলিমের মত হলো, এখানে সুন্নত দুইটি : এক. দাঁত ও মুখ পরিষ্কারের সুন্নত। দুই. উপকরণের সুন্নত। টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কারের সুন্নত আদায় হবে, তবে ডাল বা উপকরণের সুন্নত আদায় হবে না।
এর জবাবে ভিন্ন মতাবলম্বী আলিমগণ বলেন, উপকরণের সুন্নতও আদায় হবে। কারণ, রাসুল (সা.) বিশেষ কোনো গাছের ডালকে নির্দিষ্ট করে যাননি; এতেই বুঝা যায় মিসওয়াক নিছক একটি মাধ্যম মাত্র, এই উপকরণ আধুনিক সময়ের টুথব্রাশও হতে পারে। কারণ, টুথব্রাশ দিয়ে সব প্রয়োজনই পূরণ হচ্ছে।
যাহোক, আমরা বলব— কোনো সন্দেহের মধ্যে না গিয়ে হুবহু নবিজিকে অনুসরণ করতে পারলে, সেটিই উত্তম হবে। এতে রাসুলকে ভালোবাসার জন্যও আলাদা নেকি পাওয়া যাবে। তাই, টুথব্রাশ ব্যবহারের পাশাপাশি মিসওয়াক ব্যবহার করাও উত্তম কাজ হবে। বিশেষত আমরা ঘুম থেকে ওঠে— ঘুমাতে যাওয়ার সময় ও খাবারের পর টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারি। আর প্রত্যেক নামাজের সময় অজুর পূর্বে মিসওয়াক ব্যবহার করতে পারি। সেটা অল্প করে হলেও যথেষ্ট হবে। এমনকি ২/৩ বার দাঁতে এদিক-ওদিক করলেও সুন্নাহ আদায় হবে।
আলিমগণ বলেন, মিসওয়াক ব্যবহারের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট হলো- আরাক গাছের ডাল। আবদুল্লাহ মাসউদ (রা.) নবীজির জন্য এই ডাল সরবরাহ করেছিলেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৩৯৯১)
আরও পড়ুন : খাবারের আগে যে ৩ কাজ সুন্নত
এটি না পাওয়া গেলে তালপাতার ডাল অথবা জয়তুনের ডাল ব্যবহার করা উত্তম। আমাদের দেশের জলপাই অনেকটা জয়তুনের মতোই। অনেক আলিম নিম গাছের ডাল ব্যবহার করতে বলেন। এছাড়াও অন্যান্য ডালে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলে, সেগুলো ব্যবহার করতেও সমস্যা নেই। তবে মিসওয়াকের ক্ষেত্রে কাঁচা ডাল ব্যবহার করা উত্তম।