নেক আমল যে কারণে গোপন রাখবেন
সৌভাগ্যবান সেই সাত প্রকার মানুষ— যাদের আল্লাহ্ আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। তাদের মধ্যে দুজন হলো— যে এমনভাবে দান-সদকা করে যে, তার ডান হাত কী দান করছে, তা তার বাম হাতও টের পায় না। অপরজন হলো— সে নির্জনে-নিভৃতে আল্লাহ্কে স্মরণ করে; আর তার চোখ দিয়ে অবিরত অশ্রু বয়ে যায়। (বুখারি, আস-সহিহ, হাদিস : ১৪২৩; মুসলিম, হাদিস : ১০৩১)
তাদের উভয়ের আমলের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, তাদের আমলে গোপনীয়তা লক্ষণীয়। ইমাম মালিক ইবনু আনাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যু-যন্ত্রণা ও কিয়ামতের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, সে যেন প্রকাশ্যে আমলের চেয়ে— গোপনে অধিক আমল করে।’ (তারতিবুল মাদারিক ওয়া তাক্বরিবুল মাসালিক)
সাহাবাদের মাঝে এটি ছিল— একটি স্বাভাবিক ও সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আবু বকর (রা.) চুপে চুপে গিয়ে এক বৃদ্ধার খেদমত করে আসতেন এবং তাকে খাইয়ে দিতেন। এটি জানতে পেরে উমর (রা.)-ও সেই বৃদ্ধার খেদমত করার সুযোগ খুঁজতেন। আলি বিন যাইনুল আবিদিন (রহ.) নিজ কাঁধে করে বস্তিবাসীদের নিকট খাবার পৌঁছাতেন অথচ তাদের তিনি নিজের পরিচয় দিতেন না। যেদিন তিনি মারা যান, সেদিন তাঁর পিঠে দাগ দেখা যায়। সেটা দেখে এবং বস্তিবাসীর খাবারের জন্য হাহাকার দেখে সবাই বুঝতে পারে যে, তিনি এতদিন সংগোপনে খাবার পৌঁছে দিতেন। এমন উদাহরণ সাহাবি-তাবিঈগণের মাঝে অসংখ্য।
ইবনুল কায়্যিম (রা.) বলেন, পূর্বসূরি নেককারদের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল যে, তারা অন্তত একটি বিশেষ নেক আমল এতটাই গোপন রাখতেন যে, তাদের স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যরাও জানতেন না। এর কারণ হলো, অন্তত এই একটি আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে যাতে পুরোপুরি পরিতুষ্ট ও নিশ্চিন্ত থাকা যায়। আর আমাদের নেক আমলগুলো প্রায়ই লৌকিকতার মিশ্রণ থাকে।
উল্লেখ্য, গোপন আমলে উৎসাহিত করা হচ্ছে মানে— এই না যে, প্রকাশ্যে নেক আমল করা যাবে না। অবশ্যই করা যাবে। এর প্রমাণও সাহাবিদের মধ্যে অহরহ আছে। তবে, গোপন আমল উত্তম। গোপন আমলে ইখলাস থাকে বেশি। বিশেষত ফরজ আমল প্রকাশ্যে এবং নফল আমল গোপনে করা উত্তম। তাছাড়া মানুষকে নেক কাজে উৎসাহিত করার জন্য প্রকাশ্যে নেক আমল করা উত্তম, যদি নিজের নিয়ত ও উদ্দেশ্যে নিষ্ঠা ও সততা থাকে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।