সিজদায় যে দোয়া পড়বেন
সিজদা নামাজের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। সিজদাসহ নামাজের প্রতিটি আমল কীভাবে করতে হবে— তা হাদিসের গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। নামাজের সিজদায় কী দোয়া পড়তে হয়— সে ব্যাপারে কয়েকটি দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
সিজদায় আমরা সাধারণত একটি দোয়া পড়ে থাকি। সে আমাদের সবার কাছে পরিচিত এবং এতে আমরা অভ্যস্ত। দোয়াটি হলো-
আরবি :
سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى
উচ্চারণ : সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা
অর্থ : আমার প্রতিপালক সুমহান ও পবিত্র। (সাহিহুল জামি, হাদিস : ৪৭৩৪)
এছাড়াও আরও অনেক দোয়া সিজদায় পড়া যায়। হাদিসে সেগুলোর আলোচনা এসেছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) তার রুকু ও সিজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়তেন—
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি।
অর্থ : হে আল্লাহ্! হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দিন। (বুখারি, হাদিস : ৭৬১; মুসলিম, হাদিস : ৪৮৪)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তার রুকু ও সিজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়তেন-
سُبُّوح قُدُّوس رب الملائكة والروح
উচ্চারণ : সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রুহ।
অর্থ : সকল ফেরেশতা এবং জিবরিলের প্রতিপালক অতিপবিত্র। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৭; আবু দাউদ, হাদিস : ৮৭৩)
আলি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন সিজদা করতেন— তখন তিনি বলতেন-
আরবি :
اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ وَأَنْتَ رَبِّي سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু ওয়া আনতা সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া চাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআ’হু ওয়া বাচারাহু তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্বিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সিজদা করছি। একমাত্র তোমার প্রতিই ঈমান এনেছি এবং তোমার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। আমার মুখমণ্ডল ঐ সত্ত্বার জন্য সিজদাবনত হয়েছে, যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন, সুসমন্বিত আকৃতি দিয়েছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কত কল্যাণময়! (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১১২৭; মুসলিম, হাদিস : ০১/৫৩৪)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, সিজদায় নবী (সা.) এ দোয়াটিও পাঠ করতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া ঝুল্লাহু; ওয়া আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু; ওয়া আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৩)
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার ছোট-বড়, পূর্বের-পরের এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ করে দাও।
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বিছানায় পেলাম না। আমি তাকে খুঁজতে লাগলাম। আমার হাত তার পা মোবরকের তলাতে ঠেকলো। তখন তিনি মসজিদে উভয় পায়ের পাতা খাড়া অবস্থায় সিজদায় ছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন-
আরবি :
اللهم اني اعوذ بك برضاك من سخطك وبمعافتك من عقوبتك و اعوذ بك منك لا احسي ثناء عليك انت كما اثنيت علي نفسك
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজু বি-রিদাকা মিন সাখাতিকা ওয়া বি-মুআ’ফাতিকা মিন উ’কুবাতিকা ওয়া আ’উজুবিকা মিনকা লা উহসি ছানাআন আলাইকা আংতা কামা আছনাইতা আলা নাফসিকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাই। আর তোমার শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাই। তোমার প্রশংসা করে শেষ করা যায় না। তুমি সেই প্রশংসার যোগ্য, যেরূপ তুমি নিজেই করেছ। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৬; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৮৪১; রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস : ১৪৩০)
আবি মুসা (রা.) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) সিজদায় এ দোয়াটিও পড়তেন-
আরবি :
اللهمَّ اغفِرْ لي خطيئَتي وجَهلي ، وإسرافي في أمري ، وما أنت أعلمُ به مني ، اللهمَّ اغفرْ لي خطَئي وعَمْدي ، وهَزْلي وجِدِّي ، وكلُّ ذلك عندي ، اللهمَّ اغفرْ لي ما قدَّمتُ وما أخَّرتُ ، وما أسررتُ وما أعلنتُ ، أنت المقدِّمُ وأنت المؤخِّرُ ، وأنت على كلِّ شيء قديرٌ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি খাত্বিয়াতি ওয়া ঝাহলি ওয়া ইসরাফি ফি আমরি ওয়া আংতা আ’লামু বিহি মিন্নি; আল্লাহুম্মাগফিরলি ঝিদ্দি ওয়া হাযলি ওয়া খাত্বায়ি ওয়া আ’মদি ওয়া কুল্লু জালিকা ইংদি; আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লানতু, আংতাল মুকাদ্দিম ওয়া আনতাল মুওয়াখখির, ওয়া আনতা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি আমার অসতর্কতা বশত কৃত গুনাহ, অজ্ঞতা বশত অপরাধ, আমার কাজের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন এবং তুমি আমার ওই সমস্ত অপরাধও ক্ষমা করে দাও যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক অবগত আছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমার চেষ্টাপ্রসূত, হাসি-ঠাট্টাপ্রসূত, ভুলবশত এবং ইচ্ছাকৃত সকল গুনাহ্ মা’ফ করে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৬৩৯৯; মুসলিম, হাদিস : ২৭১৯; সাহিহুল জামি, হাদিস : ১২৬৪)