মেহমানদের যেভাবে আপ্যায়ন করতে বলেছেন নবীজি
আতিথেয়তা ও মেহমানদারি ইবাদত। মেহমানদারি যদি আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর তরিকায় হয়, তাহলে পার্থিব ও পরকালীন দুই ধরনেই লাভ। মেহমানকে সম্মান জানানো, খুশি করা ও আনন্দিত করার পাশাপাশি বিপুল সওয়াবও লাভ হয়। তাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি।
এক. মেহমান এলে খুব দ্রুত তাকে স্বাগত জানানো
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর কাছে আগমন করে, মহানবী (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কারা?’ তারা বলল, ‘আমরা (আবদুল কায়েস গোত্রের) রবিআ শাখার লোক।’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘ওই জাতিকে মারহাবা! ওই প্রতিনিধিদলকে মারহাবা! এটা তোমাদের অপরিচিত কোনো জায়গা নয়। এখানে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩; মুসলিম, হাদিস : ১৭)
দুই. উপস্থিত যা আছে, তা দিয়ে আপ্যায়ন করা
আবদুল্লাহ ইবনে ওবায়েদ ইবনে উমায়ের (রহ.) বলেন, হজরত জাবের (রা.) নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের এক জামাতের সঙ্গে আমার কাছে তাসরিফ আনলেন। হজরত জাবের (রা.) সঙ্গীদের সামনে রুটি ও সিরকা পেশ করলেন এবং বললেন, “এটা খাও, কেননা আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, ‘সিরকা’ উত্তম তরকারি। সে ধ্বংস হোক, যে তার কয়েকজন ভাই তার কাছে আসে, আর সে ঘরে যা আছে, তা তাদের সামনে পেশ করাকে কম মনে করে। ওই সব লোক ধ্বংস হোক, যারা তাদের সামনে যা পেশ করা হয়, তারা তাকে তুচ্ছ ও কম মনে করে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মানুষের ধ্বংসের জন্য এটা যথেষ্ট যে যা তার সামনে পেশ করা হয়, সে তাকে কম মনে করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানি)
তিন. মেহমানের জন্য বসার আলাদা ব্যবস্থা করা
মেহমান কারো কাছে গিয়ে মেজবানের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসবে না। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ কারো ঘরে গিয়ে তার অনুমতি ছাড়া তার নির্দিষ্ট আসনে বসবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩)
আরও পড়ুন : খাবারের আগে যে ৩ কাজ সুন্নত
চার. আলেম মেহমানকে অত্যধিক সম্মান করা
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যাদের ধর্মীয় জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১)
পাঁচ. মেজবান মেহমানদারির কাজে অংশগ্রহণ করা
ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, তিনি নিজেই দ্রুত আগত মেহমানদের জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “তোমার কাছে ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানদের কথা পৌঁছেছে কি? যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ জবাবে সেও বলল, ‘সালাম।’ তারা তো (ছিল) অপরিচিত লোক। তারপর ইবরাহিম তার স্ত্রীর কাছে গেল এবং মোটাতাজা গরুর বাছুর ভুনা করে নিয়ে এলো। তারপর তা তাদের সামনে রেখে বলল, ‘তোমরা খাচ্ছ না কেন?’” (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ২৪-২৭)
ছয়. খাবার নিয়ে লৌকিকতা প্রদর্শন না করা
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, “আমরা হজরত উমর (রা.)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘আমাদের লৌকিকতা প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে’।” (বুখারি, হাদিস : ৭২৯৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট। আর তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৯২, মুসলিম, হাদিস : ২০৫৮)