ফেরেশতারা কী কী করে জানেন কি?
ফেরেশতা— আল্লাহর এক অপার সৃষ্টি। তাদের বাসস্থান আসমানে, নিজস্ব জগতে তাদের আকার-আকৃতি আছে; কিন্তু মানুষের কাছে তাদের প্রকাশ্য কোনো রূপ-আকৃতি নেই। তারা মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নবী ও রাসুলদের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতেন।
কোরআন-হাদিসের বহু জায়গায় ফেরেশতাদের নিয়ে আলোচনায় এসেছে। এখানে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো—
ফেরেশতারা কীসের তৈরি?
আল্লাহ তাআলা এই জাতিকে নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা মানুষের মতো রক্ত-মাংসের সৃষ্টি নয়। মানবজাতিকে সৃষ্টি করার আগেই তাঁদের আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ফেরেশতাদের নুর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াশূন্য অগ্নিশিখা থেকে এবং আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই বস্তু থেকে যে সম্পর্কে তোমাদের বর্ণনা করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৮৫)
ফেরেশতাদের কি ডানা আছে?
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের পালকবিশিষ্ট ডানা দান করেছেন, যা দ্বারা তারা উড়তে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সকল প্রশংসা আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহরই, যিনি প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন ফিরিশতাদের যারা দুই দুই, তিন তিন অথবা চার চার ডানাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (সুরা ফাতির, আয়াত : ১)
ফেরেশতাদের পাখার সংখ্যা বিভিন্ন। কারো দুই, কারো তিন এবং কারো চার পাখা রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে একেক ফেরেশতাকে আল্লাহ একেক রকমের শক্তি দান করেছেন। যাকে দিয়ে যেমন কাজ করাতে চান তাকে ঠিক তেমনিই দ্রুতগতি ও কর্মশক্তিও দান করেছেন। এক হাদিসে এসেছে, জিবরাইল (আ.)-এর ছয় শ পাখা রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৪৮৫৬)
ফেরেশতারা কেমন সুন্দর?
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের অত্যন্ত সুন্দর কাঠামো ও শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তাকে (রাসুলকে) শিক্ষা দান করেছেন প্রচণ্ড শক্তিশালী, সৌন্দর্যপূর্ণ সত্তা। অতঃপর তিনি স্থির হয়েছিলেন। (সুরা নাজম, আয়াত : ৫-৬)
এর দ্বারা বোঝা যায় যে ফেরেশতারা অত্যন্ত সুন্দর। তারা যেমন সুন্দর তাদের চরিত্রও তেমনি। তাই তারা কোনো খারাপ আকৃতি গ্রহণ করেন না।
ফেরেশতারা কি পানাহার করে?
ফেরেশতারা কোনো কিছু আহার ও পান করেন না। আল্লাহ তাআলা তাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে তাদের কোনো আহার তন্দ্রা-নিদ্রার প্রয়োজন হয় না। তারা সর্বদাই আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে। একদা একদল ফেরেশতা মানবাকৃতিরূপে ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আগমন করে। তিনি দ্রুততার সঙ্গে তাদের জন্য খাবার পরিবেশন করলেন। কিন্তু তারা খাবার গ্রহণ করল না, তারা বলল, আমরা ফেরেশতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর ইবরাহিম তার স্ত্রীর কাছে দ্রুত চুপিসারে গেলেন এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে এলেন। অতঃপর তিনি তা তাদের সামনে রেখে বলেন, ‘তোমরা কি খাবে না? এতে তাদের সম্পর্কে তার মনে ভীতির সঞ্চার হলো। তারা বলল, ‘ভীত হবেন না।’ আর তারা তাকে এক জ্ঞানীপুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ২৭-২৮)
তারা যেকোনো রূপ ধারণ করতে পারে : ফেরেশতাদের আল্লাহ তাআলা এমন যোগ্যতা দিয়েছেন যে তারা যখন যে রূপ ধারণ করতে মন চায় তা ধারণ করতে পারে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, জিবরাইল (আ.)-কে দেখলাম তার কাছাকাছি সদৃশ ব্যক্তি হচ্ছে দিহইয়া। (মুসলিম, হাদিস : ৩১২)
ফেরেশতারা কখনো ক্লান্ত হয় না
ফেরেশতারা কখনো বিরক্ত কিংবা ক্লান্তিবোধ করেন না। মানুষ যেভাবে অনেক পরিশ্রমের ফলে ক্লান্ত হয়ে যায় তারা সে রকম নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তারা ক্লান্তও হয় না।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২২০)
ফেরেশতাদের বংশবিস্তার হয় কি?
ফেরেশতা কোনো লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের আল্লাহ তাআলা কোনো প্রবৃত্তি দেননি, কামভাব সৃষ্টি হয় না। তারা বিবাহ-শাদি করেন না এবং তাদের বংশ বিস্তার হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তারা বলে, ‘দয়াময় (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র, মহান! তারা (ফেরেশতা) তো তার সম্মানিত বান্দা।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২৬)
ফেরেশতাদের সংখ্যা কতো?
তাদের সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কারো জানা নেই। তাদের সংখ্যা একটি হাদিস থেকে অনুমান হয়। মেরাজের ঘটনা বর্ণনার সময় রাসুল (সা.) বলেন, ‘অতঃপর বায়তুল মামুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হলো। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে ৭০ হাজার ফেরেশতা নামাজ আদায় করে। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয়বার ফিরে আসে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৩২০৭)
ফেরেশতারা যেমন চরিত্রের অধিকারী
ফেরেশতারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাদের কাজে-কর্মে সততা ও নিষ্ঠা ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশংসা করে বলেন, (যারা) মহাসম্মানিত ও নেককার। (সুরা আবাসা, আয়াত : ১৬)
ফেরেশতারা যেমন জীবনযাপন করে
ফেরেশতারা সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের যখন যা বলেন তা-ই করেন। কোনো ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদের আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত হয় তা-ই করে।’ (সুরা আত তাহরিম, আয়াত : ৬)