জাহান্নাম থেকে বাঁচতে যে ৫ আমল করবেন
জাহান্নাম ভয়ঙ্কর স্থান। এটা পাপিষ্ঠ ও অবিশ্বাসীদের ঠিকানা। যেখানে গুনাহগারদের শাস্তি দেওয়া হবে। কিছু পাপিষ্ঠ সেখানে শাস্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর অবিশ্বাসীরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করবে।
জাহান্নাম হলো আখিরাতে এমন একটি বিশাল এলাকা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারিত আছে। সেগুলোকে প্রধানত সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলোকে জাহান্নামের নামও বলা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো- ১. নার তথা আগুন। ২. জাহান্নাম তথা আগুনের গর্ত। ৩. জাহিম তথা প্রচণ্ড উত্তপ্ত আগুন। ৪. সায়ির তথা প্রজ্বলিত শিখা। ৫. সাকার তথা ঝলসানো আগুন। ৬. হুতামাহ তথা পিষ্টকারী। ৭. হাবিয়া তথা অতল গহ্বর।
জাহান্নামের শাস্তি যেমন হবে
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের কিছু বিবরণ দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা তো লেলিহান অগ্নি, যা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে।’ (সুরা মাআরিজ, আয়াত : ১৫-১৬)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তাদের মাথার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা দিয়ে তাদের চামড়া ও পেটের ভেতর যা আছে তা বিগলিত করা হবে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ১৯-২০)
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক হাজার বছর জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়েছে। ফলে তার আগুন রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অতঃপর পুনরায় এক হাজার বছর উত্তাপ দেওয়ার ফলে এটি সাদা রং গ্রহণ করেছে। তারপর আরও এক হাজার বছর উত্তাপ দেওয়ার ফলে এর আগুন কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং জাহান্নাম এখন সম্পূণরূপে গাঢ় কালো তমসাচ্ছন্ন।’ (তিরমিজি শরিফ)
জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ কখনো প্রশমিত হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা (আজাব) আস্বাদন করো, আমি তো তোমাদের শাস্তি কেবল বৃদ্ধিই করব।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৩০)
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে যে পাঁচ আমল করবেন
এক. আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহ রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্মান রক্ষা করে, সে আল্লাহর কাছে এ অধিকার পায় যে— তিনি তাকে দোজখ থেকে মুক্ত করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ, সহিহুল জামে, হাদিস : ৬২৪০)
দুই. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল হামদুলিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল কিংবা ভালো কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ওই দিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা যাপন করল যে সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২২০)
তিন. আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল্লাহু আকবার’ ৩৩ বার পাঠ করে, এরপর একবার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ পাঠ করে, ওই ব্যক্তির সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনার সমতুল্য হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২৩৯)
চার. ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫/৩৩৯; সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ৯৭২)
পাঁচ. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ, যদিও খেজুরের এক টুকরো সদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভালো কথা বলে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪১৩)