কাউকে ক্ষমা করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন
ভুল করার প্রবণতা মানুষের মজ্জাগত। ভুল আচরণ-উচ্চারণ নিজ বা অন্য যে কারও থেকেই ঘটতে পারে। ভুলের মাশুল গুনতে আগ্রহী নই— আমরা কেউই। ক্ষমা বা ছাড়টাই পছন্দ সবার। সমাজ জীবনে বাঁচতে হলে মানুষকে ক্ষমা ও ছাড় দিয়েই চলতে হবে। অজ্ঞ মূর্খদের সর্বদা ক্ষমা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। কাজেই মুমিনকে এ গুণে গুণান্বিত হওয়া উচিত। ক্ষমা করা দৃঢ় সংকল্প ব্যক্তিত্বের পরিচারক। ক্ষমা ব্যতিরেকে এ জগত সংসার অচল হতে বাধ্য।
শিরক ছাড়া সব গুনাহ মাফ করবেন আল্লাহ
আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল। মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহাপ্রতাপশালী। তিনি ইচ্ছা করলে মুহূর্তের মধ্যে সকল অবাধ্য গুনাহগার বান্দাদের ধ্বংস করে দিতে পারেন। তার কাজে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। এতদসত্বেও বহু সংখ্যক মানুষ তাকে এবং তার দেওয়া জীবন বিধানকে কেবল অস্বীকারই করে না, বরং তার বিরুদ্ধাচরণ করে এবং শিরকের ন্যায় জঘন্য পাপে লিপ্ত হয়। অথচ আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেন। মহান আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে এগুলো অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন।’ দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠা : ৭২৩
যেমন- আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘আপনি ক্ষমা করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
এ আয়াতের মর্ম সম্পর্কে নবীজি (সা.)-কে জিবরাঈল (আ.) বলেন, ‘হে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তা'আলা আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আপনার সাথে সম্পর্ক বিছিন্ন করে, আপনি তার সাথে সম্পর্ক অবিছিন্ন রাখুন। যে আপনাকে বঞ্চিত করে, আপনি তাকে দান করুন এবং যে আপনার প্রতি অবিচার-অত্যাচার করে, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন।’ তাফসিরে তাবারি, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ৭১৫)
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
ক্ষমা করা একটি নববী গুণ
প্রভূত কল্যাণী এ মহৎ গুণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিলেন সকল নবী-রাসুল। মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে সে কথাই জানিয়েছেন— পবিত্র কোরআনে, ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিলেন— দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসুলগণ।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত : ৩১৫)
আরও পড়ুন : সুন্দর কথা বললে সদকার সওয়াব
আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমাদেরও উচিত ক্ষমা, দয়া ও উদারতার গুণে নিজেদের সজ্জিত করা। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.) আমাদের সে হেদায়াতই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি ওদের মার্জনা কর, ওদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত : ১৪)
ক্ষমাকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন
কোরআনের অপর এক আয়াতে মানুষকে ক্ষমা ও ছাড়ের ব্যাপারটাকে আল্লাহ তাআলা খুবই আশাব্যঞ্জক ও পরকালীন সমৃদ্ধির উপকরণ বলে বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হও যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্হায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সম্বরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককার লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৪)
ক্ষমাশীল ও ধৈর্যবানের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরবে ও ক্ষমা করবে, সন্দেহাতীতভাবে এটা বড় উচ্চমানের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের অন্যতম।’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত : ৪৩)
মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়াটা তাকওয়ার পথকে মসৃণ করে। ক্ষমা তাকওয়ার নিকটবর্তী গুণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ক্ষমা করে দেয়াই তাকওয়ার নিকটতম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৭)
আল্লাহ ক্ষমাকারীর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন
মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) অপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেছিলেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। নবীজি (সা.) ব্যক্তিগত কোন কষ্টের প্রতিশোধ নেননি কখনও। ক্ষমাই করেছেন জীবনভর।
একবার এক বেদুঈন পেছন থেকে শক্তকরে নবীজির চাদর টেনে ধরায় গলায় ফাঁস লাগার উপক্রম হয়, দাগ পড়ে যায়। সে কিছু চাচ্ছিল নবীজির কাছে। নবীজি পেছন ফিরে মুচকি হাসিতে বললেন তাকে কিছু দিয়ে দিতে। রাগ করেন নি। বিরক্তি ভাবও প্রকাশিত হয়নি তাঁর থেকে। ক্ষমা ও ছাড়ের প্রবাদপ্রতীম এক দৃষ্টান্ত।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘সদকা করাতে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিণীত হলে তিনি তার সম্মান প্রতিষ্ঠিত করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)
পূর্ণ মুমিন হিসেবে জীবন যাপনে আগ্রহী হলে এবং আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হতে চাইলে— অবশ্যই আমাদের ক্ষমা ও ছাড়ের পথে হাঁটতে হবে।
আল্লাহ তাআলা তার ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের দলে আমাদের শামিল করুন।
মুফতি বুরহান উদ্দিন আব্বাস।। ইমাম-খতিব ও ধর্মীয় চিন্তক