জুমার দিন যে কারণে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ
জুমার দিন সাপ্তাহিক শ্রেষ্ঠ দিন। মুসলমানদের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনের কিছু সময়ে আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। হাদিসে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ের ব্যাপারে কথা উল্লেখ হয়েছে। তবে জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় কোনটি— সেটা নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
শুক্রবারকে আরবিতে ‘ইয়াওমুল জুমুআহ’ বলা হয়। জাহিলি যুগে এ দিনটিকে ‘ইয়াওমুল আরুবাহ’ বলা হতো। এর আরও নাম আছে। যেমন— ১. সায়্যিদুল আইয়্যাম। ২. আফজালুল আইয়্যাম। ৩. ইয়াওমুল আজহার। ৪. ইয়াওমুল আতিক।
তবে পবিত্র কোরআনে এ দিনটিকে ‘ইয়াওমুল জুমুআহ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এখানে জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষত্ব আলোচনা করা হলো—
আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার
আল্লাহ তাআলা এ দিনটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে মনোনীত করেছেন। অন্য নবী-রাসুলদের উম্মতদের এই দিন দেওয়া হয়নি, বরং শুধু আমাদের-ই দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের পূর্ববর্তীদের পথভ্রষ্ট করেছেন। ইহুদিদের জন্য (শ্রেষ্ঠ দিন) শনিবার আর খ্রিস্টানদের জন্য রবিবার। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তারা হবে আমাদের পশ্চাদগামী। আমরা পৃথিবীর মধ্যে সর্বশেষ আগমনকারী; কিন্তু সৃষ্টিকুলের বিচার অনুষ্ঠানের দিক থেকে হব সর্বপ্রথম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৩)
সগিরা গুনাহ মোচন করা হয়
কোনো মুসলিম যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং জুমার নামাজ নিয়মিত আদায় করে আর কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তাহলে শুক্রবারের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে দুই জুমার মধ্যবর্তী সব সগিরা গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)
পরকালে অগ্রগামী হওয়ার নিদর্শন
কিয়ামতের দিন অন্য নবীদের উম্মতদের চেয়ে আমরা থাকব সর্বদিক থেকে অগ্রগামী। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমরা সর্বশেষ উম্মত; কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা হব অগ্রগামী। যদিও সব উম্মতকে কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে আর আমাদের দেওয়া হয়েছে সবার শেষে। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৬৩)
কবরের আজাব লাঘব করা হয়
শুক্রবার মৃত্যুবরণ করা প্রকৃত মুসলিমের সৌভাগ্যের নিদর্শন। কেননা শুক্রবারের বরকতে এ দিনে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি কবরের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করেন। হাদিসের ভাষায়, জুমার দিনে অথবা রাতে কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে, তাহলে মহান আল্লাহ তাকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৭৪)
শুক্রবারের পাঁচটি বিশেষত্ব
স্রষ্টার পক্ষ থেকে শুক্রবার শুধু উপহারই নয়; বরং আল্লাহ তাআলা দিনটিকে নানা বিশেষত্বে ভরপুর করে দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ১. এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২. তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। ৩. এই দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ৪. এই দিনে এমন একটি সময় আছে (আসরের পর), এই সময়ে কেউ হারাম জিনিস ছাড়া অন্য কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা মঞ্জুর করেন। ৫. আর এ দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)
দুই জুমার মাঝে আলো সুরা কাহফ
আল্লাহ এ দিনে আর একটি বিশেষ অফার দিয়েছেন সুরা কাহফের তিলাওয়াতের মধ্যে। যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়টি আলোকিত থাকবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় জ্যোতির্ময় হবে। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৫৯৯৬)
আমাদের উচিত, এ বরকতপূর্ণ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।