রোগীর সেবায় মহানবী (সা.)-এর সুন্নত
ইসলামে সেবা রোগীর অধিকার। রোগী ও অসুস্থকে দেখতে যাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। মহানবী (সা.)-এর আমল, আচরণ ও নির্দেশনা থেকে রোগীর প্রতি চিকিৎসাসেবার শিষ্টাচার প্রমাণিত হয়। রোগীর আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, সাধারণ সেবক ও চিকিৎসকসহ অন্যরা সেগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এতে সুন্নত আদায়ের পাশাপাশি রোগীর প্রতি সেবা-যত্নও হবে।
সুস্থতার জন্য দোয়া করা
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কে দেখতে গিয়ে তিনবার এই দোয়া করেন—
হে আল্লাহ, আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন।
(বুখারি, হাদিস : ৫৬৫৯)
অবস্থা জানতে চাওয়া
মহানবী (সা.) রোগী দেখতে গেলে কাছে গিয়ে বসতেন। রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) মৃত্যুশয্যায় শায়িত এক যুবককে দেখতে যান এবং বলেন, তোমার অবস্থা কেমন? ...’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৮৩)
প্রয়োজন-প্রত্যাশা পূরণ করা
রোগীর কোনো চাহিদা কিংবা কোনো জিনিসের প্রয়োজন আছে কি না— তা জানতে চাওয়া সুন্নত। রোগীর জন্য ক্ষতিকর না হলে তা পূরণ করাও সুন্নত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন—
তুমি কিছু চাও? তুমি ‘কাআক’ (খাবার জাতীয়) চাও? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তারা রোগীর জন্য তা সংগ্রহ করল।
(মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪০১৬)
দোয়া চাওয়া
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁকে বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে, তখন তাকে তোমার জন্য দোয়া করতে বলবে। কেননা, তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৪১)
দোয়া পাঠ করা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোগী দেখে সাতবার এই দোয়া পাঠ করতেন—
উচ্চারণ : ‘আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আঁই ইয়াশফায়াকা।
অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যিনি মহা আরশের প্রতিপালক; তিনি যেন তোমাকে সুস্থ করে দেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০৮৩)
লক্ষণীয় ও জরুরি
ইসলামী আইনজ্ঞরা রোগী দেখতে যাওয়ার বিভিন্ন আদব-শিষ্টাচার উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন- রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ দীর্ঘ করা উচিত নয়, এতে তার কষ্ট হতে পারে। চিকিৎসক কিংবা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত নিয়ম-সূচি অনুযায়ী সাক্ষাৎ করা। রোগীকে আশান্বিত করা। রোগী কষ্ট পেতে পারে— এমন কথা ও আচরণ না করা।
রোগীর কষ্ট হতে পারে এমনকি সুগন্ধি-সেন্টও ব্যবহার না করা। এছাড়াও এতো বেশি দেখা-সাক্ষাতে না যাওয়া, যাতে করে রোগীর বিশ্রাম নিতে কিংবা চিকিৎসা ব্যাহত হয়। (আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়্যা : ৩১/৭৭-৭৯)
আল্লাহ আমাদের সুন্দর ও উত্তমভাবে রোগীসেবার তাওফিক দান করুন।