স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরিপূরক। দাম্পত্য-জীবনের মাধ্যমে উভয়ের দ্বীনের পূর্ণতা পায়। মানসিক প্রশান্তি ও মানবিক সুখ লাভ হয়। পবিত্র কোরআন-হাদিসে এভাবেই বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবু কি তারা মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস করবে? তারা কি আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? (সুরা নাহল, আয়াত : ৭২)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
তাঁর আরো এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাদের কাছে তোমরা প্রশান্তি অনুভব করো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও অনুগ্রহ তৈরি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
(সুরা রুম, আয়াত : ২১)
জীবন-পরিক্রমায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। তবে একটি সুখ-শান্তিময় পরিবার গঠনে স্বামী ও স্ত্রীর বহু করণীয়, দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এখানে পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মৌলিক কিছু দায়িত্বের আলোচনা করা হয়েছে।
পূর্ণ মোহরানা আদায়
স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করে দেওয়া স্বামীর প্রথম দায়িত্ব। এটি হতে হবে পুরোপুরি সন্তুষ্টচিত্তে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে দান করবে। সন্তুষ্টচিত্তে তারা মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত : ৪)
সাধ্যমতো ভরণ-পোষণ
স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পিতার কর্তব্য যথাবিধি তাদের (সন্তান ও তার মায়ের) ভরণ-পোষণ করা।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন, তা থেকে ব্যয় করবে।’ (সুরা আত তালাক, আয়াত : ৬-৭)
স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে সত্ভাবে জীবন যাপন করবে।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত : ১৯)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,
‘তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, বুকের হাড় থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। সবচেয়ে প্যাঁচানো বা বাঁকানো হচ্ছে বুকের ওপরের হাড়টি। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে ওরকম বাঁকা রয়েছে। অতএব, তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’
(বুখারি, হাদিস : ৫১৮৬)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নারীদের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা, তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে তাদের দায়িত্ব নিয়েছো। আল্লাহর নামে বিশেষ অঙ্গ নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়েছো।’ (মুসলিম, হাদিস : ১২১৮)
বাসস্থানের ব্যবস্থা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস করো, তাদেরও (স্ত্রীদের) সেরূপ গৃহে বাস করতে দাও। তাদের কোনো কষ্ট দেবে না তাদের (জীবন) সংকটে ফেলার জন্য...।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৬)
দ্বীনদারি শিক্ষা দেওয়া
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর...।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
অহেতুক সন্দেহ না করা
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা নিজেদের লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না? কেন তারা বলল না যে এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ!’ (সুরা নূর, আয়াত : ১২)