সুরা ইখলাসের সওয়াব ও ফজিলত
সুরা ইখলাস কোরআনের ক্ষুদ্র সুরাগুলোর অন্যতম। সুরা কাওসারের পর এই সুরাই সবচেয়ে ছোট। সুরা ইখলাস পবিত্র কোরআনের ১১২ নম্বর সুরা। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরক্তি, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য, ভক্তিপূর্ণ উপাসনা। এই সুরা হিজরতের আগে মক্কার প্রথম যুগে অবতীর্ণ হয়, সুরাটি সুরা নাসের পরে। সুরা ইখলসের আয়াত সংখ্যা ০৪। রুকুর সংখ্যা একটি।
ইখলাস বলা হয়, শিরক থেকে মুক্ত হয়ে— তাওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে। এ সুরার মর্মার্থের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে সুরা ইখলাস।
কোরআনের তিনভাগের এক ভাগ
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা আল-ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে মহানবী (সা.)-কে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘ওই সত্তার শপথ! যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি : ৫০১৩; আবু দাউদ : ১৪৬১; নাসায়ি : ২/১৭১; মুআত্তা মালেক : ১/২০৮)
সুরা ইখলাসে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ
একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবিদের একদল সৈনিককে যুদ্ধে পাঠান। তাদের একজনকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি যুদ্ধকালীন দীর্ঘ সময়ে কেবল সুরা ইখলাস দিয়ে নামাজ পড়িয়েছেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর সৈন্যরা মহানবী (সা.)-কে সে ব্যাপারে অবহিত করেন। তখন নবী কারিম (সা.) তাদের বলেন, ‘তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো— কেন সে এরূপ করেছে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলে— সেনাপতি তাদের জানান, এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। তাই আমি এ সুরাকে ভালোবাসি।
মহানবী (সা.) তখন সাহাবিদের বলেন, ‘তোমরা তাকে গিয়ে বলো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৫; মুসলিম, হাদিস : ৮১৩; নাসায়ি, হাদিস : ২/১৭০)
আরও পড়ুন : আয়াতুল কুরসি পাঠে যে পুরস্কার পাওয়া যায়
সুরা ইখলাস জান্নাত লাভের কারণ
মহানবী (সা.)-এর কাছে একবার এক সাহাবি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৭৪; তিরমিজি, হাদিস : ২৯০১)
গুনাহ মাফ হয় সুরা ইখলাস পাঠে
হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৮)
সুরা ইখলাস দারিদ্র্য দূর করে
সাহল ইবন সাদ সায়েদি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে দারিদ্র্যের অভিযোগ করে। তখন মহানবী (সা.) তাকে বললেন, ‘যখন তুমি ঘরে ফিরবে, তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে।’ এ আমল করার ফলে— কিছুদিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়। (কুরতুবি : ২০/১৮৫)