সৎকাজে প্রতিযোগীদের আল্লাহ পছন্দ করেন
মুমিনের কাছে সময়ের মূল্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তার কর্তব্য কল্যাণকর ও ফলপ্রসূ কাজে নিজেকে নিবেদিত রাখা। অলসতা ও নির্লিপ্ততা নিয়ে সৎকাজে যুক্ত সঠিক নয়। অথবা কোনো কাজ শরু করে কিছুটা পূর্ণ করে বাকিটা রেখে দেওয়া— এটাও অসুন্দর। অর্থাৎ কোনো রকম অলসতা অশোভনীয়।
এক আরব-কবি বলেছেন—
অলসতার দরুন আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রেখো না। কারণ, আগামীকাল তো অলসদের দিন।
রাসুল (সা.) উম্মতকে যেসব দোয়া ও আজকার শিখিয়েছেন, তন্মধ্যে নিম্নোক্ত দোয়াটি সকাল-বিকাল করতে উৎসাহ দিয়েছেন—
اللهم إني أعوذ بك من الهم والحزن والعجز والكسل
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি; ওয়াল আজযি ওয়াল কাসলি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনার কাছে দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা থেকে মুক্তি চাচ্ছি। এবং আপনার কাছে অক্ষমতা ও অলসতা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
এ কারণে পবিত্র কোরআন সৎকাজ ও কল্যাণের পথে প্রতিযোগিতা করতে এবং অগ্রগামী হতে আদেশ দিয়েছে। যাতে কোনো ধরনের অনাহুত ব্যস্ততা ও বাধা-দুর্বিপাক এসে না পড়ে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর সবার জন্যই রয়েছে কেবলা একেক দিকে, যে দিকে সে মুখ করে (ইবাদত করবে)। কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৮)
আল্লাহ তাআলা সব আহলে কিতাবদের উদ্দেশে বলেন—
‘যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদের যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, কল্যাণকর বিষয়াদির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৪৮)
জান্নাত ও পরকালীন সমগ্র নেয়ামতরাজির প্রতি উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।’ (সুরা ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২১)
আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতি দ্রুতগামী হতে ও প্রতিযোগিতা করতে আল্লাহ তাআলা নিজেই আদেশ দিয়েছেন। তার মানে যেসব জিনিস জান্নাতের যাওয়ার ও আল্লাহর ক্ষমা লাভের মাধ্যম— সেগুলো গ্রহণ করতে বলেছেন। আর সেটি হলো- ঈমান, তাকওয়া ও উত্তম আমল। পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত ও প্রশংসনীয় বিষয়ে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।
(সুরা মুতাফফিফীন, আয়াত : ২৬)
আল্লাহ তাআলা তাঁর নির্দিষ্ট কিছু নবীর প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৯০)
আহলে কিতাব সৎবান্দাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা আল্লাহর প্রতি ও কেয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল।’ (সুরা ইমরান, আয়াত : ১১৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সৎকাজে অগ্রগামী হওয়ার তাওফিক দিন।