জানাজা ও কাফন-দাফনে যেসব বিষয় জানতে হবে
মানুষ মরণশীল। ‘জন্মিলে মরিতে হইবে’। আল্লাহ যার জন্য যখন মৃত্যু অবধারিত করে রেখেছেন, তার তখন মৃত্যু হবেই। কোনোভাবেই মৃত্যু থেকে পালানো সম্ভব নয়। তাই মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করাই উত্তম।
কারও কোনো আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া-প্রতিবেশি মারা গেলে, তাদের কীভাবে কাফন দিতে হবে এবং কীভাবে জানাজা ও দাফন করতে হবে— এসব জেনে রাখা জরুরি। নিম্নে এসব বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
মৃতকে গোসল দেওয়া
প্রথমত মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজে কিফায়া। কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপর যদি ইন্তিকাল করে, তাকেও গোসল দিতে হবে এবং এটা ফরজ। আর যদি মৃতাবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে গোসল দেওয়া ভালো; তবে ফরজ নয়।
কোনো লাশ যদি লা-ওয়ারিস হয়, তাহলে তার গোসলের দায়িত্ব সব মুসলমানের। গোসল ছাড়া তার দাফন করা হলে, যারা জানে- তাদের সবাই গুনাহগার হবে।
গোসল কে করাবে?
পুরুষ নারীকে গোসল করাতে পারবে না। আবার নারীও পুরুষকে গোসল করাতে পারবে না। তবে প্রয়োজনে স্ত্রী স্বামীর গোসল করাতে পারবে; কিন্তু স্বামী স্ত্রীর গোসল করাতে পারবে না। অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক-বালিকাকে নারী-পুরুষ উভযের যে কেউই গোসল করাতে পারবে। উল্লেখ্য, মৃতের প্রিয়জনদেরই গোসল করানো উত্তম। প্রয়োজনে অন্যরাও করাতে পারবে।
মৃতকে গোসল করানোর সুন্নত
প্রথমে মৃতকে চৌকি বা গোসলের খাটিয়ার ওপর শোয়াতে হয়। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশে একটা কাপড় রাখতে হয়। হাতে কাপড় পেঁচিয়ে পেশাব-পায়খানার জায়গা পরিষ্কার করতে হয়। অজু করাতে হয়। নাকে ও মুখে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তুলা ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি ও নাকের ভেতর মুছে দেওয়া জায়েজ।
গোসল ফরজ বা হায়েজ-নেফাস অবস্থায় মারা গেলে মুখে ও নাকে পানি পৌঁছানো জরুরি। পানি যেন ভেতরে না যায় সে জন্য নাক, মুখ ও কানে তুলা দিতে হয়, এরপর ধুতে হয়।
মৃতকে বাঁ দিকে কাত করে শুইয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমনভাবে তিনবার পানি ঢালতে হয়, যেন বাঁ কাত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অনুরূপভাবে ডান কাত করে শুইয়ে তিনবার পানি ঢালতে হয়। এরপর মৃতকে কোনো কিছুর ওপর ঠেস দিয়ে বসিয়ে আস্তে আস্তে পেটে চাপ দিতে হয়। কোনো মল বেরোলে পরিষ্কার করে ধুয়ে দিতে হয়। এর জন্য পুনরায় অজু ও গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। অতঃপর বাঁ কাত করে শুইয়ে কর্পূর মেশানো পানি ঢালতে হয় তিনবার। সব শেষে একটি কাপড় দিয়ে সারা শরীর মুছে দিতে হয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/২১৮)
বিজ্ঞ ডাক্তাররা বলে থাকেন— কারো শরীরে করোনাসহ কোনো ধরনের সংক্রামক ব্যাধি থাকলে মৃত্যুর চার-পাঁচ ঘণ্টা পর তার শরীর থেকে তা আর সংক্রমিত হয় না।
কাফনের বিধি-বিধান
মৃতকে কাফন পরানো ফরজে কিফায়া। গোসলের পর কাফন পরাতে হয়। যে ধরনের কাপড় পরা জীবদ্দশায় জায়েজ ছিল, সে ধরনের কাপড় দিয়ে কাফন পরানো জায়েজ। নতুন বা পুরনো সাদা কাপড় দিয়ে কাফন পরানো উত্তম। জীবদ্দশায় নিজের জন্য কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা জায়েজ। (ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/৫৬৩)
পুরুষের কাফনের কাপড়ের পরিমাণ
পুরুষের কাফনের কাপড় তিনটি হওয়া সুন্নত। তা হলো, সেলাইবিহীন জামা, ইজার ও চাদর। জামা হবে গলা থেকে পা পর্যন্ত, তাতে হাতা থাকবে না। ইজার হবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত। চাদর হবে ইজারের চেয়ে এক হাত লম্বা। (ফাতহুল কাদির : ২/১১৭)
নারীর কাফনের কাপড়ের পরিমাণ
নারীর কাফনের কাপড় পাঁচটি হওয়া সুন্নাত। তা হলো, উপরোল্লিখিত তিনটি এবং উড়না ও সিনাবন্দ। উড়না হবে তিন হাত লম্বা। সিনাবন্দ হবে বগল থেকে হাঁটু পর্যন্ত। (দুররুল মুখতার : ৩/৯৫)