টয়লেট ব্যবহারের সুন্নত
মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধান পরিব্যাপ্ত। জীবনের খুঁটিনাটি থেকে বৃহৎ— প্রত্যেকটি কিছুর বর্ণনা ও সমাধান রয়েছে ইসলামে। কারণ, ইসলাম আল্লাহকর্তৃক মানুষের জন্য মনোনীত জীবনব্যবস্থা। ফলে ইসলামের প্রতিটি বিষয় জীবনঘনিষ্ঠ বা জীবনের সঙ্গে জড়িত। আর এর থেকে বাদ যায়নি প্রস্রাব-পায়খানার মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ও।
আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য পিতার মতো। আমি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকি। তোমরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কেবলাকে সামনে বা পেছনে দিয়ে বসবে না। ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পাদন করবে না।’ তিনি তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড্ডি দ্বারা ঢিলা করা থেকে বারণ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ০৭)
উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত নির্দেশনা ছাড়া প্রস্রাব-পায়খানার নির্দিষ্ট আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে, প্রত্যেকের উচিত এগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া। সেগুলো হলো—
১. ওয়াশরুমে প্রবেশের সময় মাথা ঢেকে রাখা। (বাইহাকি, হাদিস : ৪৫৬)
২. জুতা-সেন্ডেল পরিধান করে যাওয়া। (তাবাকাতে ইবনে সাআদ, হাদিস : ১৮৫; কানজুল উম্মাল,হাদিস : ১৭৮৭২)
৩. টয়লেটে প্রবেশের আগে দোয়া পড়া। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নোংরা জায়গাগুলো জ্বিন ও শয়তানদের থাকার জায়গা। অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ যখন প্রসাব-পায়খানায় যায়, সে যেন এই দোয়া বলে-
اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-ইস।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট পুরুষ-জ্বিন ও দুষ্ট নারী-জ্বিনের অনিষ্ট থেকে। (বুখারি, হাদিস : ১৪২ )
অথবা যেন এই দোয়া বলে-
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-ইস।
অর্থ : আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুষ্ট পুরুষ-জ্বিন ও দুষ্ট নারী-জ্বিনের অনিষ্ট থেকে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদিস : ৫)
৪. দোয়া পড়ার পর আগে বাম পা ঢুকানো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২)
৫. কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে না বসা। (বুখারি, হাদিস : ১৪৪)
৬. যথাসম্ভব বসার নিকটবর্তী হয়ে সতর খোলা এবং বসা অবস্থায় পেশাব ও পায়খানা করা, দাঁড়িয়ে পেশাব না করা। (নাসায়ি, হাদিস : ২৯ তিরমিজি, হাদিস : ১৪)
৭. পেশাব ও নাপাক পানির ছিঁটা থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বেঁচে থাকা। (বুখারি, হাদিস : ২১৮)
৮. পানি খরচ করার পূর্বে ঢিলা-কুলুখ (বা টয়লেট পেপার) ব্যবহার করা। (বাইহাকি, হাদিস : ৫১৭)
৯. ঢিলা ও পানি খরচ করার সময় বাম হাত ব্যবহার করা। (বুখারি ,হাদিস : ১৫৪)
১০. পেশাবের ফোঁটা আসা বন্ধ হওয়ার জন্য আড়ালে সামান্য চলাফেরা করা। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩২৬)
১১. যেখানে পেশাব ও পায়খানার জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা নেই, সেখানে এমনভাবে বসা— যেন ছতর নজরে না পড়ে। (আবু দাউদ,হাদিস : ০২)
১২. পেশাবের জন্য নরম বা এমন স্থান তালাশ করা যেখান থেকে পেশাবের ছিঁটা শরীরে বা কাপড়ে না লাগে। (আবু দাউদ, হাদিস : ০৩)
১৩. ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করা। (সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস : ৮৩)
১৪. ডান পা দিয়ে বের হওয়া। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩২)
১৫. বাইরে এসে এই দোয়া পড়া—
الحمدُ للهِ الذي أَذْهَبَ عَنَّى الأَذَى وعَافَانِي
উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমার হতে কষ্টদায়ক বিষয়সমূহ দূর করেছেন এবং আমাকে নিস্তার দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০ : ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০১)