যেসব আমলে ওমরাহর সওয়াব
মক্কা শরিফের কালো গিলাফ ও মদিনা মুনাওয়ারার সবুজ গম্বুজ। এই দুইটির সঙ্গে এক আত্মিক সুতোয় বাঁধা প্রতিটি মুমিনের হৃদয়। সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা এবং নবীজির রওজায় উপস্থিত হয়ে সালামের নাজরানা পেশ করা— প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেকসময়ই পূর্ণ হয় না হৃদয়ের মণিকোঠায় লালিত সেই সোনালি স্বপ্ন।
আল্লাহর অনেক বান্দা-বান্দি আছেন, যারা আজীবন হৃদয়ে এ স্বপ্ন লালন করেছেন এবং সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার আগেই পরপারের ডাক এসে গেছে। আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের উত্তম নিয়ত ও চেষ্টার যথাযথ প্রতিদান দেবেন। এজন্য সাধ্য না থাকলেও থাকা চাই পূর্ণ চেষ্টা এবং বাস্তব পদক্ষেপ। তাহলেই হয়ত পথ খুলবে বা অন্তত এ চেষ্টার বিনিময় তো লাভ করা যাবে।
আর দয়াবান আল্লাহ বান্দার জন্য এমন কিছু পথও রেখেছেন, যেগুলো দ্বারা বান্দা হজের অথবা ওমরার সওয়াব লাভ করতে পারে। আমরা যদি বিশ্বাস এবং সওয়াবের দৃঢ় আশা নিয়ে এসব আমল করতে পারি, তবে অনেক প্রতিদানের অধিকারী হতে পারব— ইনশাআল্লাহ। আমরা এখানে হাদিস শরিফে বর্ণিত সে আমলগুলো উল্লেখ করছি—
এক. নামাজের পর তাসবিহ পড়া
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর তাসবিহ আদায় করা। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘দরিদ্র সাহাবিরা নবী কারিম (সা.)-এর নিকট এসে আরজ করলেন, ধনাঢ্য সাহাবিরা উচ্চ মর্যাদা এবং চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে যাচ্ছেন! আমরা নামাজ পড়ি, তারাও পড়েন! আমরা রোজা রাখি, তারাও রাখেন! উপরন্তু তাদের রয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ। ফলে তারা হজ করেন, ওমরাহ করেন, জিহাদ করেন এবং দান-সদকা করেন! (আমরা এসব করতে পারি না।)
নবীজি তাদের বললেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল শিখিয়ে দেব না, যা করতে পারলে তোমরা অগ্রগামীদের স্তরে পৌঁছে যাবে এবং যারা তোমাদের পেছনে তারা তোমাদের স্তরে পৌঁছাতে পারবে না এবং তোমরা হবে বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তবে কেউ এই আমল করলে সেটা ভিন্ন বিষয়। তোমরা প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে— তাহলেই এ ফজিলত লাভ করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯৫; সহিহ ইবনে খুজায়মা, হাদিস : ৭৪৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২০১৪)
অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার প্রত্যেকটি ৩৩বার পড়ার কথা এসেছে। তবে অন্য বর্ণনায় এসেছে— প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ পড়বে এবং একবার নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে ১০০ পূর্ণ করবে। দোয়াটি হলো-
لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।
অর্থ : আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো অংশিদার নেই। সবকিছুর রাজত্ব তারই, সকল প্রশংসা তার। তিনি সবকিছুর ওপর সর্ব ক্ষমতাবান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫০৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭২৪৩; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ২০১৫)
বি. দ্র. প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪বার আল্লাহু আকবার পড়ার যে আমলটি প্রসিদ্ধ সেটাও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং এরও অনেক ফযীলত আছে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৫৯৬; জামে তিরমিযী, হাদিস ৩৪১২)
আরও পড়ুন : হজের সওয়াব লাভের আমল
দুই. ফজর নামাজ শেষে বিশেষ আমল
ফজরের নামাজের পর সূযোর্দয় পর্যন্ত মসজিদে বসে জিকির করতে থাকা, এরপর দুই রাকাত নামাজ পড়া। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা,) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করল, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরার সওয়াব নিয়ে ফিরল।’ (মুজামে কাবির লিত-তাবারানি, হাদিস : ৭৭৪১)
তিন. ফরজ নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া
আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর থেকে বের হয় সে হজ আদায়কারীর মত সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি শুধু পূর্বাহ্নের নামাজ (চাশতের নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে মসজিদে যায়, সে ওমরাহ আদায়কারীর মত সওয়াব লাভ করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৩০৪)
চার. দ্বীন শিখতে মসজিদে যাওয়া
দ্বীন শেখা বা শেখানোর লক্ষ্যে মসজিদে গমন করলে হজের সওয়াব পাওয়া যায়। আবু উমামা (রা. ) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারীর মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (মুজামে কাবির লিত-তাবারানি, হাদিস : ৭৪৭৩)
পাঁচ. মা-বাবার সেবা করা
আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে তাকওয়ার সাথে পিতা-মাতার খেদমত করা। আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারিম (সা.)-এর খেদমতে এসে বলল, আমার জিহাদ করতে খুব আগ্রহ, কিন্তু সামর্থ্য নেই। নবী কারিম (সা.) বললেন, তোমার মা-বাবা দুইজনের কেউ জীবিত আছেন কি? বলল, আমার মা জীবিত আছেন। নবীজি (সা.) বললেন—
আল্লাহ তাআলা আমাদের উক্ত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন এবং এর মাধ্যমে হজ ও উমরার সওয়াব লাভের তাওফিক দিন। আমিন।