কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম
মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম নিজ হাতে কোরবানি করতেন। মদিনার জীবনে মহানবী (সা.) কখনো কোরবানি ত্যাগ করেননি। কোরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যারা কোরবানি করে না, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের ভর্ৎসনা করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন। প্রতিবছরই তিনি কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৪৯)
এই কোরবানি মহানবী (সা.) নিজ হাতে করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর কোরবানির পশুর ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে নিজ হাতে কোরবানি করতে দেখেছি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৫৫)
কোরবানির ছুরি প্রদর্শন ও রক্তপাতের মহড়া নয়
কোরবানি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বিনম্র প্রকাশ। আল্লাহর বান্দা হিসেবে উচিত ছিল নিজের জীবন আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। কিন্তু সেটি সম্ভব না হলে অন্তত নিজের উপার্জিত অর্থে কেনা পশু (প্রাণ) আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করাই কোরবানির মূল কথা। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা হলো, পশুর ওপর মানবিকতা ও দয়ার্দ্রতা প্রকাশ করতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) (কোরবানির আগে) ছুরি ধারালো করতে এবং তা পশুর দৃষ্টির অগোচরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তোমাদের কেউ জবেহ করার সময় যেন তা দ্রুত সম্পন্ন করে (যাতে পশু অধিক পরিমাণে কষ্ট না পায়)।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৭২)
অনেক সময় দেখা যায়, আগেভাগে গোশত খাওয়ার জন্য ঈদের নামাজের আগেই কোরবানি করে ফেলা হয়। অথচ ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করলে কোরবানি হবে না। জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) কোরবানির দিন (প্রথমেই) নামাজ আদায় করেন। তারপর তিনি খুতবা দেন। এরপর (কোরবানির পশু) জবেহ করেন। তিনি ঘোষণা দেন—নামাজের আগে যে ব্যক্তি পশু জবেহ করবে, তাকে নামাজের পর আরেকটি পশু জবেহ করতে হবে...।’ (বুখারি, হাদিস : ৯২৮, ৬৮৮৪)
পশু জবেহ করার নিয়ম
১. জবাই করার আগে পশুকে ঘাস, পানি ইত্যাদি ভালোভাবে খাওয়াতে হবে। কোরবানির প্রাণীকে ক্ষুধার্থ বা পিপাসার্ত রাখা অন্যায়। ২. পশুকে কোরবানি করার স্থানে টেনে-হিঁচড়ে নেওয়া অন্যায়। ৩. জবেহ করার জন্য পশুকে কঠোরভাবে শোয়াবে না। ৪. কিবলার দিকে ফিরিয়ে বাঁ পাশের ওপর শোয়াতে হবে। ৫. পশুর চার পায়ের মধ্যে তিনটি বাঁধবে।
৬. আগে থেকেই ছুরি ধার দিয়ে রাখবে। ভোঁতা ছুরি দিয়ে জবেহ করবে না। ৭. কোরবানির পশু শোয়ানোর পর ছুরি ধারানো অন্যায়। বরং আগেই ধার দিয়ে রাখতে হবে (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া, ১/৯৮) ৮. এমনভাবে জবেহ করা যাবে না, যার ফলে গলা পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায়। ৯. জবেহ করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে। ১০. একটি পশুকে আরেকটি পশুর সামনে জবাই করবে না। ১১. পশুর প্রাণ বের হওয়ার আগে চামড়া খসানো যাবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ২/২৭৩)