তাকবিরে তাশরিক কখন পড়বেন?
আইয়ামে তাশরিক বা তাশরিকের দিন কোনগুলো— এমন প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। মূলত জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর নামাজের পর থেকে নিয়ে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত সময়কে তাশরিকের দিন বলে।
এই দিনগুলোর প্রতি ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার—
الله أكبر الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد.
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। এটিকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। (হেদায়া : ১/২৭৫)
তাকবিরে তাশরিক পড়ার সওয়াব ও ফজিলত
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
তাকবিরে তাশরিক কতবার ও কীভাবে পড়বেন
তাশরিকের দিনগুলোতে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষদের ওপর উচ্চৈঃস্বরে একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। আর নারীরা নিচু স্বরে পড়বে, যাতে নিজে শোনে। (ফাতাওয়া শামি : ২/১৭৮)
ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের— সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার : ২/১৮০)
ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবির পড়ে নেবে। তবে হ্যাঁ, নামাজের বিপরীত কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, যেমন— কথা বলা, নামাজের স্থান থেকে উঠে পড়া ইত্যাদি হলে তাকবির বলতে হবে না, বরং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। (শামি : ৬/১৭৯)
তাকবিরে তাশরিক সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো
প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক তিনবার বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কীভাবে তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবীর বলতেন তা হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একাধিকবার তাকবিরের কথা উল্লেখ নেই। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৫৬৯৮, ৫৬৯৯; আল-আওসাত, হাদিস : ২১৯৮, ২২০০)
তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম আরাফার দিন নামাজের পর উক্ত তাকবির বলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৫৬৯৬)
অবশ্য কোনো কোনো সাহাবি থেকে তাকরিরে তাশরিকের সঙ্গে অন্য কিছু মিলিয়ে পড়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন হযরত ইবনে উমর (রা.) তাকবিরে তাশরিকের আগে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। (আল-আওসাত, হাদিস : ২২০১)
আর পূর্ণ তাকবিরে তাশরিক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদগণও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়। (আল-আওসাত, হাদিস : ২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ-দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আল-বাহরুর রায়েক ২/১৬৫
তাকবিরে তাশরিকের আমল যেভাবে চালু হয়েছে
প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ ও বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন—
যখন হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি রাখলেন, এদিকে আল্লাহর নির্দেশে হজরত জিবরাঈল (আ.) আসমান থেকে একটি দুম্বা নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করছিলেন।কিন্তু জিবরাঈল (আ.)-এর আশঙ্কা ছিল, তিনি দুনিয়াতে পৌঁছার আগেই ইবরাহিম (আ.) জবাইপর্ব সমাপ্ত করে বসবেন। ফলে তিনি আসমান থেকে উঁচু আওয়াজে বলে উঠলেন : ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।’
ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনে আসমানের দিকে নজর ফেরাতেই দেখতে পেলেন জিবরাঈল (আ.) একটি দুম্বা নিয়ে আগমন করছেন। ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর।’ পিতার কণ্ঠে এই কালিমা শুনতেই ইসমাঈল (আ.) উচ্চারণ করলেন : ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
একজন ফেরেশতা আর দুজন প্রিয় নবীর এ বাক্যমালা আল্লাহর খুব পছন্দ হয়। তাই কিয়ামত পর্যন্ত এই বাক্যমালা আইয়ামে তাশরিকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়াকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/১৭৮, ইনায়া শরহুল হিদায়া : ১/৪৬৪)