মহামারির সময় কোরবানি না করলে কি চলবে?
কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। মহৎ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। রাসুল (সা.) হিজরত করার পর প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। এরপর থেকে তিনি কখনো কোরবানি করা থেকে বিরত থাকেননি।
কোরবানির মৌলিক বিধান
কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। সামর্থ্যের পরও কেউ কোরবানি না করলে হাদিসে তার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি এসেছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থের পরও কোরবানি দেয় না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, পৃষ্ঠা : ২৫৬)
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির দিনগুলোতে (জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) কোরবানির চেয়ে অধিক পছন্দনের কোনো আমল নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)
কোরবানির বদলে অর্থ দান জায়েজ?
তাই কোরবানির দিনগুলোতে বুদ্ধিমান, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকিম এবং নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শর্তানুসারে পশু জবাই করা ওয়াজিব। নির্ধারিত দিনে সামর্থবান হওয়ার পরও কোরবানি না দিয়ে বিকল্প হিসেবে এর মূল্য দান করলে কোরবানি আদায় হবে না।
অতএব কোরবানির বদলে দান-সদকা যথেষ্ট নয়; বরং নির্ধারিত ব্যক্তির ওপর কোরবানিই করতে হবে। পক্ষান্তরে নিজ শহর ও রাজ্যে পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলে, অন্যকোনো স্থানে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পশু কোরবানির ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
আর কোরবানির দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও নিজে বা কারো মাধ্যমে কোরবানি আদায় করা সম্ভব হয়নি, এমন পরিস্থিতিতে দুই ধরনের পন্থা হতে পারে। এক. আগ থেকে পশু ক্রয় করা থাকলে তা জীবিত সদকা করতে হবে। তা একজন বা একাধিক ব্যক্তি ক্রয় করুক। দুই. পশু ক্রয় করা না থাকলে মধ্যম পর্যায়ের একটি ছাগলের মূল্য বা বড় পশুর এক সপ্তমাংশের মূল্য সদকা করতে হবে।
করোনার সময় কোরবানিতে সতর্কতা ও করণীয়
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সে কারণে সংক্রমণ রোধে দেশে নতুন করে লকডাউন চলছে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির আনুসাঙ্গিক কাজগুলো সম্পন্ন করতে— অনেকে হিমশিম খেতে পারেন বলে মনে করছেন। তবে নিম্নোক্ত তিনটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে, আমরা সহজে কোরবানি আদায় করতে পারব।
এক. পশু কেনা ও বাজারে যাওয়া
করোনার কারণে মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষত অনেকের পশুর হাটে যেতে অনীহা রয়েছে। অন্যদিকে অনলাইন হাটগুলোতে পশু কেনাকাটার বিজ্ঞাপনও নজরে পড়ছে। আগ্রহ দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষের। সে হিসেবে ক্রেতারা ঘরে বসেই অর্ডার দিয়ে কিনতে পারছেন।
সরকারিভাবে অনলাইন পশুর হাট চালু হয়েছে বিভিন্ন শহরে। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও হয়তো দেখা যেতে পারে। এ বছরও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাই এই পরিস্থিতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে — কোরবানির পশু ক্রয়ের যেহেতু সুযোগ রয়েছে; সুযোগটি কাজে লাগানো যেতে পারে।
দুই. পশু কেনার ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা
কোরবানি পালন একটি ছাগল কিংবা ভেড়া দিয়েও করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোরবানির জন্য বাজেটের বাড়তি ব্যয়ে গরিব-অসহায় ও কর্মহীন মানুষের জন্য সহায়তামূলক কিছু কাজ করা যেতে পারে। তাদের পানাহার ও মানবিক প্রয়োজন পূরণ করাও যায়। এতে সদকার সওয়াব লাভ হবে।
ধরুন, কেউ গত বছর এক লাখ টাকার গরু কোরবানি করেছিল। তারা চাইলে এ বছর সীমিত পরিসরে কিছুটা কম দামে গুরু কোরবানি দিতে পারে। তাহলে গরুর মূল্য ৫০ হাজার টাকা হলে বাকি ৫০ হাজার টাকা দান করতে পারবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কোরবানির টাকা দান করে দিলে কিংবা কোরবানির বিকল্প কিছু করলে কোরবানি আদায় হয় না। কারণ, কোরবানির স্বতন্ত্র্য ইবাদত।
তিন. ঈদুল আজহার ৩ দিনে ভাগ করে কোরবানি
ইসলাম কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। সবসময় ইসলাম মানুষের কল্যাণ বিবেচনা করে। তাই কোরবানির বিধান পালনের সুবিধার্থে ইসলামের দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
জিলহজ মাসের ১০, ১১, ১২ এই তিন দিন কোরবানি আদায়ের সুযোগ রয়েছে। তাই সবাই ১০ তারিখে একত্রে ভিড় না করে প্রতিটি এলাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে ভাগ করে নেওয়া যায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ও সুবিধামতো ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করা যায়।
আল্লাহ আমাদের জন্য সবকিছু সহজ করে দিন।