মালয়েশিয়ার বিখ্যাত নীল মসজিদ দেখতে যেমন
সুলতান সালাহ উদ্দিন আবদুল আজিজ মসজিদ বা দ্যা ব্লু মস্ক মালয়েশিয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদ। এটি ইন্দোনেশিয়ার ইস্তিকলাল মসজিদের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত ‘শাহ আলম’ শহর। শহরটিকে ১৯৭৪ সালে সেলাঙ্গর রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। তখনই সুলতান সালাহ উদ্দিন আবদুল আজিজ এই মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেয়।
১৯৮৩ সালের পহেলা আক্টোবর মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আর ১৯৮৭ সালের ১৫ আগস্ট নির্মাণ কাজ শেষ হয়। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৮৮ সালের ১১ মার্চ।
মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার আছে। প্রতিটি মিনার সমতল থেকে ৪৬০ ফুট উঁচু। মরক্কোর ভাসমান মসজিদের মিনার তৈরির আগে এই মসজিদের মিনার ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ মিনার। তাই ১৯৯৩ সালে উঁচু মিনারের জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে এই মসজিদ তালিকাভুক্ত হয়। মসজিদে একসঙ্গে চব্বিশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
এই মসজিদের গ্র্যান্ড ফ্লোরে রয়েছে পরিচালকের অফিস, সম্মেলন কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, অভ্যর্থনা কক্ষ ও সেমিনার হল। নিয়মিত নামাজ আদায় হয় প্রথম তলায়। নামাজ আদায়ের প্রধান এই ফ্লোরটি দুই স্তরবিশিষ্ট। এখানে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য একটি অংশ সংরক্ষিত রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ব্যবহার হয় ইসলামি প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে।
সুলতান সালাহ উদ্দিন আবদুল আজিজ মসজিদের গম্বুজটি গাঢ় নীল এবং রূপালি রঙের বিশেষ কারুকার্যের সমন্বয়ে গম্বুজটি নির্মিত। নীল গম্বুজবিশিষ্ট হওয়ার কারণে অনেকের কাছে এটি নীল মসজিদ হিসেবে পরিচিত। গম্বুজটি নীল রঙের অ্যালুমিনিয়াম ও নীল গ্যাস দিয়ে মোড়ানো। আর গ্যাসগুলো মুসলিম ঐতিহ্য সম্বলিত নানা কারুকার্য ও কোরআনের আয়াতের ক্যালোগ্রাফি দ্বারা সজ্জিত। গ্যাস থেকে নীল আলোর প্রতিবিম্বের কারণে মসজিদের রঙ-ও পরিবর্তন হয়ে নীল হয় ক্ষণে ক্ষণে।
ইসলামি স্থাপত্য শিল্প ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থাপত্য শিল্পের সমন্বয়ে নীল মসজিদের ডিজাইন করা হয়। এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়। ফলে যখন সূর্যের আলো নীল কাঁচের মধ্য দিয়ে ভেতরে যায়— তখন মসজিদের সর্বত্র নীলাকার হয়ে যায়; মনে হয় যেন এক নীল নিসর্গ।
মসজিদের গম্বুজে, নামাজ আদায়ের মূল ফ্লোরে, সেমিনার কক্ষে ও মসজিদের আসা যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ইসলামি ক্যালিগ্রাফি মসজিদের শোভা বর্ধন করেছে। প্রখ্যাত মিশরীয় ক্যালিগ্রাফার শায়খ আবদুল মুনয়িম আলী শারকারী ডিজাইনে তৈরি হয় এসব ক্যালিগ্রাফি।
নীল মসজিদের চারপাশে ১৪ হেক্টর জায়গা জুড়ে ইসলামিক আর্টস গার্ডেন নামে একটি বাগান রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, কুরআনে বর্ণিত ‘হাদিকাতুল ফেরদৌস’ তথা জান্নাতি উদ্যানের কাল্পনিক শৈল্পিক চিত্রায়নে এটি একটি ল্যান্ডস্কেপ বাগান। মসজিদের অনতিদূরে ‘শাহ আলম হ্রদ’ নামে একটি চমৎকার লেকও রয়েছে।
ইসলামি আর্টস গার্ডেনে ৯টি গ্যালারি রয়েছে; যেখানে ইসলামি শিল্পকলার মূল্যবান সংগ্রহ রয়েছে। যেমন- ইসলামি ক্যালিগ্রাফি, খোদাইকৃত কর্ম, চিত্রকর্ম ও আর্কিটেকচার। বাগানে সময়ে সময়ে ইসলামি ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
পার্কটিতে শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন খেলার জল উদ্যানও রয়েছে। আর ‘শাহ আলম’ লেকে ঘুরে বেড়ানো ও পিকনিকের জন্য দর্শনার্থীদের জন্য নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের পাড়ে ‘বিকেএনএস’ নামে একটি শপিং সেন্টার রয়েছে; যেটি শাহ আলম শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত শপিং সেন্টার।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, কক্সবাজার।