মহানবী (সা.) এর বড় মেয়ে যায়নাব (রা.) এর দাম্পত্য জীবন যেমন ছিল

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর বড় মেয়ে ছিলেন হজরত যায়নাব রা.। মুহাম্মদ সা. নবুয়ত লাভের দশ বছর আগে হজরত যায়নাব রা. জন্ম গ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয়। আপন খালাতো ভাই আবুল আস ইবনে আর রাবী ইবনে আবদুল উজ্জার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আবুল আস খাদিজা রা.-এর আপন ছোট বোন হালা বিনতে খুওয়াইলিদের ছেলে ছিলেন।
বিয়ের সময় যায়নাবকে তার মা খাদিজা রা. একটি ইয়ামানী আকীকের হার উপহার দিয়েছিলেন।
মুহাম্মদ সা. নবুয়ত লাভ করলে তিনি মায়ের সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে তার স্বামী অনেক পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমানরা মদিনায় হিজরতের সময় যায়নাব মুশরিক স্বামীকে মক্কায় রেখেই হিজরত করেন। হজরত যায়নাব ও আবুল আসের মাঝে গভীর সম্পর্ক ছিল। যায়নাব স্বামীকে অনেক ভালোবাসতেন। রাসূল সা. তাদের সম্পর্ক ও ভদ্রোচিত কর্মপদ্ধতির প্রায়ই প্রশংসা করতেন।
আবুল আস স্ত্রী যায়নাবকে অনেক ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন। স্ত্রীর সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ না করলেও মক্কার কুরাইশদের প্ররোচনায় স্ত্রীকে কোনো কষ্ট দেননি। কুরাইশরা প্রায় সময় আবুল আসকে বলতো—
তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমরা মুহাম্মদের মেয়েদের বিয়ে করে তার দুশ্চিন্তা নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়েছো। তোমরা যদি এই মেয়েকে তার কাছে ফেরত পাঠাতে তাহলে সে তোমাদেরকে ছেড়ে তাদরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। তারা আবুল আসকে বলতো—
তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার বাবার কাছে পাঠিয়ে দেও। এর পরিবর্তে তুমি কুরাইশের যে সুন্দরী চাও আমরা তোমাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিব। আবুল আস বলতেন, আল্লাহর কসম! তা হয় না। আমার স্ত্রী আমি ত্যাগ করতে পারি না। তার পরিবর্তে সব নারীকে দিলেও আমি তা করবো না।
আরও পড়ুন
হজরত যায়নাবও স্বামী আবুল আসকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। স্বামীর প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও ত্যাগের একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো এখানে—
মহানবী সা. মদিনায় হিজরতের পর যায়নাব স্বামীর সঙ্গে মক্কায় থেকে যান। এর মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কুরাইশদের মধ্যে বিশেষ অবস্থানের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়। এই যুদ্ধে কুরাইশদের অনেকে নিহত হয়। অনেকে বন্দী হয়। কেউ কেউ পালিয়ে জীবন বাঁচায়।
বন্দীদের মধ্যে রাসূল সা.-এর জামাই আবুল আসও ছিলেন। এক হাজার থেকে চার হাজার দিরহামের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নবীকন্যা যায়নাব রা. বিয়েতে মায়ের কাছ থেকে উপহার পাওয়া হারটি মদিনায় পাঠালেন স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে।
রাসূল সা. হারটি দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। প্রিয়তমা স্ত্রী এবং অতি আদরের মেয়ের স্মৃতি ভেসে উঠলো তার মানপটে। তিনি সাহাবিদের বললেন—
আমার মেয়ে যায়নাব তার স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে এই হারটি পাঠিয়েছে। তোমরা ইচ্ছা করলে তার বন্দীকে ছেড়ে দিতে পারো এবং হারটি তাকে ফেরত দিতো পারো। সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমরা তাই করবো। সাহাবিরা আবুল আসকে মুক্তি দিলেন এবং হারটি ফেরত দিলেন।
বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়ে মক্কায় ফিরে যাওয়ার পর আবুল আস নবীকন্যা যায়নাব রা.-কে মদিনায় পাঠিয়ে দেন। যায়নাব মদিনায় হিজরতের পর বেশিরভাগ সময় আবুল আস বিমর্ষ থাকতেন।
৬ষ্ঠ হিজরিতে একটি বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে তিনি সিরিয়ায় যান। ফেরার পথে কাফেলার ওপর হামলা হয়। এ সময় ভীত সন্ত্রস্ত আবুল আস মক্কায় না গিয়ে রাতের আধারে মদিনায় গিয়ে স্ত্রী যায়নাবের কাছে আশ্রয় চাইলেন। যায়নাব তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেন।
যায়নাব রা. মহানবী সা.-কে পরদিন সব জানালেন। রাসূল সা.-সাহাবিদের সঙ্গে কথা বললেন। তখন মুসলমানরা আবুল আসকে নিরাপত্তা দিলেন এবং তার কাফেলার মালামাল ফেরত দিলেন। তিনি কাফেলার মালামাল নিয়ে মক্কায় ফিরে গিয়ে যার যার সম্পদ বুঝিয়ে দিলেন এবং এরপর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলেন।
আবুল আস রা. সপ্তম হিজরিতে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। রাসূল সা. তখন কন্যা যায়নাবকে আবুল আসের হাতে সোপর্দ করেন। আবুল আস ও যায়নাবের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান ছিল। ছেলের নাম আলী, মেয়ের নাম উমামা।
হজরত যায়নাব (রা.) স্বামীর সঙ্গে পুনর্মিলনের পর এক বছর জীবিত ছিলেন। এরপর মারা যান। তার ইন্তেকালের এক বছর পর স্বামী আবুল আসও ইন্তেকাল করেন।