আটলান্টিকের পাড়ে বিখ্যাত ভাসমান মসজিদ
আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের ও ইউরোপের কাছের দেশ মরক্কো। আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। মরক্কোর বাণিজ্যিক রাজধানী কাসাব্লাঙ্কা। কাসাব্লাঙ্কা শহরে প্রবেশ করা মত্রই দূর থেকে আটলান্টিকের পাড়ে বিশাল উচুঁ মিনার দৃষ্টিগোচর হয়।
সূর্যের আলোয় এর উচ্চতায় আপনি বিমোহিত হবেন। আর চন্দ্রের আলোয় এর রকমারি আলোক সজ্জায় বিমুগ্ধ হবেন। মূলত এটি গ্র্যান্ড মস্ক হাসান-২ বা দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার।
মসজিদটি নির্মিত হয় মরক্কোর প্রয়াত বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের উদ্যোগে। এটি পৃথিবীর বড় মসজিদগুলোর একটি। এই মসজিদের সুবাদে মুসলিম বিশ্বে মরক্কোর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।
ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসোর নকশায় প্রায় ৯ হেক্টর জায়গায় নির্মিত হয় এই মসজিদ। মসজিদের অর্ধেক আটলান্টিকের পানির ওপর অবস্থিত হওয়ায় এটিকে ভাসমান মসজিদও বলা হয়।
মরক্কোর প্রাচীন ও ধর্মীয় এতিহ্যের সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদ স্থাপত্য শিল্প ও আধ্যাত্মিকতায় স্মারক হয়ে সপ্রভিত দাঁড়িয়ে আছে আটলান্টিকের পাড়ে। বনজ ও জলজ আবহে মসজিদ এরিয়ায় হৃদয় তৃপ্ত হয়। গাছ-গাছালির নয়নাভিরাম দৃশ্যে, পাক-পাখালির মনোহরী কুহুতান ও সমুদ্র-স্রোতের কলতান— সর্বোপরি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ স্থাপনায় দর্শকের হৃদয় ভরে যায়।
২০০ মিটার উচুঁ এর মিনার এবং সাদা ও সবুজ মার্বেলে সজ্জিত মিনার মরক্কোর চিরায়ত এতিহ্যের ধারক। মারাকিয়ান, আরাবিয়ান ও আন্দালুসিয়ান আর্কিটেচার— তুলে ধরে নামাজ আদায়ের মূল ফ্লোরকে চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। চিরামিকের টাইলসগুলো মনে শীতলতা নিয়ে আসে। মসজিদের ছাদটি যান্ত্রিকভাবে কিছুক্ষণ পর পর খুলে যায়। পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। মিনারের ওপর থেকে কাবার দিক নির্দেশের জন্য ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয় লেজার রশ্মি।
অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় এই বিশাল স্থাপনাটি গড়ে ওঠে। দীর্ঘ ছয় বছর নির্মাণকাজ চলে। মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। বর্তমান বাদশাহ যষ্ঠ মোহাম্মদের পিতা প্রয়াত বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের শাসনকালের প্রায় শেষের দিকে ১৯৯৩ সালের ৩০ আগষ্ট মসজিদের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।
মসজিদটি মরক্কোর সরকার ও সকল নাগরিকের অর্থায়নে নির্মিত। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রায় চল্লিশ দিন ব্যাপী মসজিদ নির্মাণে অনুদান সংগ্রহ করা হয়। মরক্কোর ধর্ম মন্ত্রলায়ের তথ্য মতে সরকারি অর্থ সংগ্রহ কর্মসূচিতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন দিরহাম জমা হয়। বর্তমানে যা ৩.১৩ মিনিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ।
মসজিদের আয়তন প্রায় নব্বই হাজার বর্গমিটার। একসঙ্গে এক লক্ষ পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের মূল কম্পাউন্ডে পঁচিশ হাজার ও বাহিরের প্রাঙ্গণে ৮০ হাজার মুসল্লির সংকুলন হয়।
মসজিদের গ্র্যান্ড ফ্লোরে অজুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে প্রায় এক হাজার চার শত ঝর্ণা ও ছয় শত টেপ স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই মসজিদে নানামুখী দাওয়াতি ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। মরক্কোর বিখ্যাত কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্ববধানে আরবি ভাষা কোর্স, বয়স্ক শিক্ষা, শিশুদের জন্য ইসলামি শিক্ষা ও অমুসলিমদের জন্য ইসলাম পরিচিতিমূলক কোর্সে চলমান রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে।
মসজিদ আঙিনায় একটি উন্মুক্ত গণগ্রন্থগার রয়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি এই গ্রন্থগার খোলা থাকে। মসজিদ এরিয়ায় একটি জাদুঘরও রয়েছে।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসা, কক্সবাজার।