যেমন ছিল হজরত ফাতিমা ও আলী রা.-এর দাম্পত্য জীবন

দ্বিতীয় হিজরিতে বদর যুদ্ধের পর হজরত আলী রা. ও নবীকন্যা ফাতিমা রা.-এর বিবাহ সম্পন্ন হয়। প্রথমে হজরত আবু বকর রা. ফাতিমা রা.-কে বিয়ের জন্য রাসূল সা.-এর কাছে প্রস্তাব দেন। রাসূল সা. প্রস্তাব গ্রহণ না করে বললেন, তার বিয়ের বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করো। এরপর ওমর রা. নবীকন্যা ফাতিমা রা.-কে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তাকেও একই উত্তর দিলেন মহানবী সা.।
তারা আলী রা.-কে ফাতিমার বিয়ের জন্য নবীজির কাছে প্রস্তাব দিতে অনুরোধ করলেন। তিনি প্রস্তাব দিলে রাসূল সা. ফাতিমাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিলেন। বিয়ের সময় আলী রা. এর কাছে রাসূল সা.-এর দেওয়া একটি বর্ম ছিল। তিনি সেটি হজরত উসমান ইবনে আফফান রা.-এর কাছে ৪৭০ দিরহামে বিক্রি করেন। এই অর্থ ছিল ফাতিমা রা.-এর দেনমোহর। এই অর্থেই কনের সাজগোজের জিনিসপত্র ক্রয় করেন আলী রা.। বিয়ের সময় ফাতিমা রা.-এর বয়স ছিল ১৫ বছর সাড়ে পাঁচ মাস। আলী রা.-এর বয়স ছিল ২১ বছর।
বদর যুদ্ধের পর আলী রা. স্ত্রী উঠিয়ে নেওয়ার জন্য একটি ঘর ভাড়া করেন। সে ঘরে বিত্ত-বৈভবের কোনো স্পর্শ ছিল না। খুব সাধারণ একটি ঘর ছিল। সেখানে কোনো মূল্যবান আসবাবপত্র, খাট-পালঙ্ক, জাজিম, গদি কোনো কিছুই ছিল না।
আলী রা.-এর একটি ভেড়ার চামড়া ছিল, তিনি সেটা বিছিয়ে রাতে ঘুমাতেন এবং দিনের বেলা সেটা মশকের কাজে ব্যবহার করতেন। তাদের ঘরে কোনো চাকর-বাকর ছিল না।
আরও পড়ুন
আসমা বিনতে উমাইস রা. আলী ও ফাতিমা রা.-এর বিয়ে ও বাসর ঘর সাজিয়েছিলেন, তিনি বলেন, খেজুর গাছের ছাল ভর্তি বালিশ-বিছানা ছাড়া তাদের আর কিছু ছিল না। তাদের বিয়ের ওলিমাতে মহানবী সা. ও আলী রা.-এর চাচা হামজা রা. দুটি উট জবাই করে আত্মীয়দের খাইয়েছিলেন।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগত মেহমানরা নব দম্পতির জন্য শুভ ও কল্যাণ কামনা করে বিদায় জানান। রাসূল সা. নব দম্পতির জন্য বরকতের দোয়া করেন। বিদায় দেওয়ার সময় তিনি মেয়েকে বললেন—
ফাতিমা, আমার পরিবারের সবচেয়ে ভালো সদস্যের সাথে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো ত্রুটি করিনি। আমি তোমাকে সবচেয়ে শক্ত ঈমানের অধিকারী, সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সবচেয়ে ভালো নৈতিকতা ও উন্নত মন-মানসের অধিকারী ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত রেখে যাচ্ছি।
ফাতিমা রা. স্বামীর ঘরে গিয়ে দেখলেন সেখানে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি চামড়ার বালিশ, বিছানা, এক জোড়া যাতা, দুটো মশক, দুটো পানির ঘড় আর আতর-সুগন্ধি ছাড়া আর কিছু নেই। ঘরের কাজের জন্য কোনো চাকর ছিল না। ফাতিমা রা. একাই সংসারের সব কাজ করতেন। যাতা ঘুরাতে ঘুরাতে তার হাতে কড়া পড়ে যায়, মশক ভর্তি পানি টানতে টানতে বুকে দাগ হয়ে যায় এবং ঘর-বাড়ী ঝাড়ু দিতে দিতে পরিহিত কাপড়-চোপড় ময়লা হয়ে যেত। আলী রা. যতটুকু পারতেন তার কাজে সহায়তা করতেন।
একবার এক যুদ্ধ থেকে অনেক গনীমতের সম্পদ পেল মুসলমানরা। আলী রা.-এ পরামর্শে ফাতিরা রা. নিজের জন্য একজন দাসি চাইলেন রাসূল সা.-এর কাছে। আসহাবে সুফফার সাহাবিরা তখন অনেক কষ্টে ছিলেন, তাই তাদের কথা বিবেচনা করে রাসূল সা. ফাতিমাকে কোনো দাসী দিলেন না।
রাসূল সা. তাদেরকে ঘরের কাজের জন্য দাস-দাসী না দিলেও সুন্দর একটি আমল শিখিয়ে দিয়ে বললেন—
প্রত্যেক নামাজের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ, দশবার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে এবং ঘুমানোর আগে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।
(আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ৬/৪৬)