ইসলামে গুরুতর সাতটি গুনাহ

শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সারাদিন মানুষ বিভিন্ন ধরনের গুনাহের কাজ করে। কিছু গুনাহ শাস্তির দিক বিবেচনায় লঘু আবার কিছু গুরুতর। গুরুতর গুনাহগুলো ইসলামে কবিরা গুনাহ বলা হয়। এখানে এমন সাতটি কবিরা গুনাহের কথা তুলে ধরা হলো।
১. শিরক।
২.অন্যায়ভাবে কোনো সতী নারীকে অপবাদ দেওয়া।
৩. যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া।
৪. অন্যায়ভাবে এতিমের সম্পদ গ্রাস করা।
৫.সুদ খাওয়া।
৬. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।
৭. জাদু করা।
এই গুনাহগুলোর সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ৭টি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাকো। তারা জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক তথা অংশীদার স্থাপন করা।’ জাদু করা, কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের মাল খাওয়া, জিহাদ থেকে পলায়ন করা, সতি নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া।’ (বুখারি)
শিরক
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় শিরক বলা হয়, কোনো জিনিসকে আল্লাহর সত্তা, গুণ অথবা কোনো কর্মের সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করাকে। অন্যভাবে বলা যায়- আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করাকে শিরক বলা হয়। আর মুশরিক অর্থ- যে আল্লাহর ক্ষমতায় অন্য কারো অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করল।
আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করার ব্যাপারে নিষেধ কোরআনে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন লোকমান উপদেশস্বরূপ তার ছেলেকে বলল- হে ছেলে! আল্লাহর সাথে শরিক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরিক করা মহা অন্যায়।’ (সূরা লোকমান, আয়াত, ১৩)
কোনো সতী নারীকে অপবাদ দেওয়া
সতী-সাধ্বী মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া আরেকটি কঠিন অপরাধ তথা কবীরা গুনাহ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—
إِنَّ الَّذِيْنَ يَرْمُوْنَ الْـمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوْا فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَـهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ
নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী সরলমনা মু’মিন মহিলাদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা নূর, আয়াত : ২৩)
যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া অন্যতম কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
يٰۤاَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ - وَمَنْ يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَه إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلٰى فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِنَ اللهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন কাফিরদের মুখোমুখি হবে বিশাল বাহিনী নিয়ে, তখন তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না। আর যে ব্যক্তি সেদিন তাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তাহলে সে আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরে আসবে। তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণের জন্য হলে ভিন্ন কথা এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর সেটি কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আল আনফাল, আয়াত : ১৫-১৬)
অন্যায়ভাবে এতিমের সম্পদ গ্রাস করা
আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ কয়েকটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম নির্দেশ ছিল- এতিমের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার না করা।
কোনো পিতৃহীনকে অসহায় ও বেওয়ারিশ মনে করে তার ধন-সম্পদ জবরদস্তিমূলকভাবে নিজ অধিকারভুক্ত করে না নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিষয়টি সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন এভাবে-
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ الۡیَتٰمٰی ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِهِمۡ نَارًا ؕ وَ سَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا
‘নিশ্চয়ই যারা পিতৃহীনদের (এতিমদের) সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের পেটে আগুন ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা (জাহান্নামের) জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সূরা নিসা : আয়াত ১০)
আরও পড়ুন
সুদ খাওয়া
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং দান-সাদকাকে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তায়ালা কোনও অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)।
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলত আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনা করে (তা-ই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগণ সম্পদপ্রাপ্ত।’ (সূরা রুম, আয়াত : ৩৯)।
অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা
কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করাও কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ তায়ালার আয়াত ও নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা ন্যায় ও ইনসাফের আদেশ করে তাদেরকেও। (হে নবী) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং এদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না। (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ২১-২২)
জাদু করা
যাদু শিক্ষা দেয়া বা শিক্ষা নেয়া শুধু কবিরা গুনাহই নয়। বরং তা শিরক এবং কুফর ও বটে। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
«وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَاْنُ وَلَكِنَّ الشَّيَاْطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاْسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزَلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَاْبِلَ هَاْرُوْتَ وَمَاْرُوْتَ وَمَا يُعَلِّمَاْنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُوْلَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ
‘সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি, তবে শয়তানরাই কুফরি করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো বাবেল শহরে বিশেষ করে হারূত-মারূত ব্যক্তিদ্বয়কে। (জিবরাঈল ও মীকাঈল) ফিরিশতাদ্বয়ের উপর কোন যাদু অবতীর্ণ করা হয়নি (যা ইহুদিরা ধারণা করতো)। তবে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় কাউকে যাদু শিক্ষা দিতো না যতক্ষণ না তারা বলতো, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ মাত্র, অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরি করো না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১০২)