ব্রিটেনের বাংলাদেশি আলেম শায়খ মোস্তফা আহমদ আর নেই
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি আলেমদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, প্রবীণ আলেমে দ্বীন, জামেয়া দারুস সুন্নাহ লন্ডনের চেয়ারম্যান— মাওলানা শায়খ মোস্তফা আহমদ সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সোমবার (৩১ মে) বাদ মাগরিব যুক্তরাজ্যের রয়েল লন্ডন হসপিটালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রবীণ এই আলেমে দ্বীন আজীবন বহুমুখী ধর্মীয় কর্মতৎপরতায় নিজেকে জড়িত রেখে ছিলেন। প্রখ্যাত মুসলিম ব্যক্তিত্ব মাওলানা আহমদ আলী বাশখান্দি (রহ.)-এর সরাসরি শাগরিদ ছিলেন তিনি। তাছাড়া শায়খে বাঘা, শায়খে বায়মপুরি, শায়খে ফুলবাড়ি, শায়খে কৌড়িয়া প্রমুখ মনীষীর সাহচর্যেও ধন্য হয়েছেন দীর্ঘসময়।
দেশে থাকতে বিয়ানীবাজার মোকাম মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় মাওলানা আবদুল গনি শায়খে হাড়িকান্দি (রহ.) এবং মাওলানা মোস্তফা সাহেব (রহ.) যুগপৎ অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। এছাড়াও দেশের প্রখ্যাত আলেম উসতাজ শায়খ যিয়া উদ্দিন হাফিজাহুল্লাহর সহপাঠী ছিলেন। তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
মাওলানা মোস্তফা সাহেব ১৯৯১ সালে লন্ডনে পাড়ি জমান। তখন থেকে বেশ কয়েকবছর মেনরপার্ক শাহজালাল মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি মাওলানা গোলাম কিবরিয়া ও মাওলানা হাফিয মোবারক আলী প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে জামেয়া দারুস সুন্নাহ লন্ডন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয়ভাবে দ্বীনের বহুবিধ খিদমত প্রদানে অবদান রেখে যাচ্ছে।
মাওলানা মোস্তফা সাহেব ইংল্যান্ডের বিভিন্ন দ্বীনি সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মাদরাসার গ্রাজুয়েটদের সংগঠন ‘আশ শিহাব পরিষদ ইউকে’-এর আজীবন সভাপতি ছিলেন। ছিলেন খতমে নবুওয়ত আন্দোলন ইউকের সভাপতি। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে-এর সিনিয়র সহসভাপতির পদও অলঙ্কৃত করেছেন বহুবছর।
এছাড়াও মাওলানা মোস্তফা সাহেব একজন হৃদয়বান দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। দেশের অনেক মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য তিনি প্রতিবছর বিরাট অংশের আর্থিক সহায়তা দিতেন। দুঃখী মানুষদের পাশে দাঁড়াতে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। দেশে একাধিক মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় তাঁর সক্রিয় ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয়।
মাওলানা মোস্তফা আহমদ ১০ই মার্চ ১৯৪১ সালে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার থানাধীন পাতনে। মিশকাত জামাত পর্যন্ত তিনি জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে পড়াশোনা করেন। পরে ভারতের বাশখান্দি মাদরাসায় গিয়ে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন।
দুই বছর আগে মাওলানা মোস্তফা সাহেবের সহধর্মিণী এই নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করেন। আজ তিনিও চলে গেলেন আপন মাওলার সান্নিধ্যে। মৃত্যুর সময় তিনি ৪ ছেলে এবং ৩ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সন্তানদের তিনি সঠিক পথে রেখে যাচ্ছেন- এটাই তার জীবনের বড় একটি সফলতা। আশা করি, তার সুযোগ্য ছেলে মাওলানা হুসাইন আহমদ স্বীয় পিতার দেখানো পথে এগিয়ে যাবেন এবং সেই কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।
আজ তার মৃত্যুর এই শোকাবহ বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে অতিবাহিত সময়গুলোর স্মৃতি মন্থর করছি। স্মৃতিগুলো আমাকে অশ্রুসিক্ত করে তুলছে। দারুস সুন্নায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমি তাঁকে একজন শান্ত, স্বচ্ছ ও মিশুক মানুষ হিসেবে পেয়েছি। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবার মানসিকতা ছিলো তার মাঝে। ছোটদের মতামতের মূল্যায়ন করতেন তিনি। আকাবিরে দেওবন্দের প্রতি ছিলো তার অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসা।
দোয়া করি আল্লাহ তাআলা তার সামগ্রিক খিদমত কবুল করে নিন। ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। আমিন।
মাহফুয আহমদ, আলেম-লেখক ও গবেষক এবং উসতাযুল হাদিস, মাদানি মাদরাসা, লন্ডন।